বাগেরহাটে বিএনপির সম্প্রতি বহিষ্কৃত এক নেতাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা

নিহত বিএনপি নেতা সজীব তরফদার
ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাটে সজীব তরফদার (৪২) নামের বিএনপির সম্প্রতি বহিষ্কৃত এক নেতাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের মধ্যপাড়া জামে মসজিদ–সংলগ্ন বাগেরহাট-রামপাল (গিলাতলা) সড়কের ওপর এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

ঘটনার সময় সজীবের সঙ্গে একই মোটরসাইকেলে থাকা তাঁর চাচা কামাল হোসেন তরফদার (৬৫) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত কামাল তরফদারের চোখে শটগানের গুলি লেগেছে। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সজীব তরফদার বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি ডেমা গ্রামের সিদ্দিক তরফদারের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুরে বাগেরহাট শহর থেকে দুটি মোটরসাইকেলযোগে সজীব তরফদারসহ তিনজন ডেমায় ফিরছিলেন। একটি মোটরসাইকেল সজীব চালাচ্ছিলেন এবং তাঁর পেছনে ছিলেন কামাল হোসেন তরফদার (৬৫)। অন্য একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন মুন্না নামের স্থানীয় আরেক ব্যক্তি। তাঁরা কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মির্জাপুর জামে মসজিদের কাছে এলে সেখানে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা সজীবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় ওই দুর্বৃত্তরা। মৃত্যু নিশ্চিত করে ওই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

হত্যার কারণ সম্পর্কে পুলিশ এখনো কিছু জানতে পারেনি। তবে স্বজনদের অভিযোগ, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সজীবের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠান। ঘটনাস্থল থেকে তাঁরা তিনটি গুলির খোসা, একটি রক্তাক্ত দা, সজীবের মোটরসাইকেলসহ কিছু আলামত জব্দ করেছেন। হত্যার কারণ সম্পর্কে পুলিশ এখনো কিছু জানতে পারেনি। তবে স্বজনদের অভিযোগ, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

সজীবের বড় ভাই নাজমুল তরফদার বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সজীবকে হত্যা করেছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে কারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে একাধিকবার নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলায় জেল খেটেছেন সজীব তরফদার। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ডেমা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে চিংড়িঘের, গরু, মহিষ ও জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।

তবে বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দ নাসির আহমেদ মালেক বলেন, সজীব জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এটি পরিকল্পিত হত্যা দাবি করে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পাওয়া বুলেটের খোসা থেকে বোঝা যায়, এটা শটগানের গুলি। ধারণা করছি, শটগান দিয়ে গুলি করে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা নিশ্চিত করতে একাধিক দল ছিল। হত্যাকারীরা মুখোশ পরা ছিল। নিহত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।’ খুব দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।