ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় রাজশাহীর বাগমারায় যুবদল নেতা মুনছুর রহমানকে গুলি করার অভিযোগে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য (এমপি) আবুল কালাম আজাদ, এনামুল হকসহ ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১৫০ জনকে।
বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ভুক্তভোগী মুনছুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মামলাটি করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল মালেক মণ্ডল, এমপি এনামুল হকের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত মতিউর রহমান ওরফে টুকু।
মামলার বাদী মুনছুর রহমান বাগমারা উপজেলার রামরামা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর দুই পা গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে গত ২২ আগস্ট প্রথম আলো অনলাইনে ‘দুর্বৃত্তদের ছোড়া একটি গুলি অপসারণ করা যায়নি, ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন যুবদল নেতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে যুবদল নেতা মুনছুর রহমান মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জে আসছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ভবানীগঞ্জ কারিগরি কলেজের সামনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীরা লাঠি, হকিস্টিক, রামদা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাঁদের ধাওয়া করেন। এ সময় মুনছুর রহমান দৌড়ে পালানোর সময় ধানখেতের ভেতরে পড়ে যান। সেখানেই তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। তাঁর পকেটে থাকা আট হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন হামলাকারীরা। তাঁকে পিটিয়ে জখম করার পর তাঁর ডান পায়ে যুবলীগের নেতা সোহেল রানা ও বাঁ পায়ে গুলি করেন যুবলীগ নেতা শাহিন ইসলাম। একটি গুলি মুনছুর রহমানের পায়ের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। আরেকটি গুলি পায়ে আটকে যায়।
হামলাকারীরা এলোপাতাড়ি ককটেলের বিস্ফোরণও ঘটান। স্থানীয় একদল নারী অচেতন অবস্থায় ধানখেত থেকে মুনছুরকে উদ্ধার করেন। পরে তাঁর চেতনা ফিরলে স্থানীয় যুবদলের নেতারা তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসার পর তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে নিয়ে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
চিকিৎসার পর মুনছুর রহমান এই মামলা করলেন। বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতা হারানোর পর সাবেক এমপি এনামুল হক এই প্রথম কোনো মামলার আসামি হলেন। এর আগে আরেক সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। মামলার বেশির ভাগ আসামি আত্মগোপনে আছেন।
কয়েকজন আসামির সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, তাঁরা ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আওয়ামী লীগ করার কারণে তাঁদের মামলায় আসামি করা হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল মালেক মণ্ডলকে আটকের পর মোহনপুরের একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।