নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নাজিরপুর ইউনিয়নের সন্ধ্যাহালা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
দুই ভাই-বোন হলো সন্ধ্যাহালা গ্রামের কমল মিয়ার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে তোফায়েল মিয়া ও আলাল উদ্দিনের তিন বছর বয়সী মেয়ে আফরোজা খাতুন। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই-বোন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে শিশু তোফায়েল ও আফরোজা বাড়ির আঙিনায় খেলছিল। একপর্যায়ে সবার অগোচরে তারা বাড়ির সামনের সড়কের পাশে ডোবায় পড়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবারের লোকজন তাদের দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে সন্ধ্যার দিকে ডোবা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ছমির আলী বলেন, খেলার ছলে দুই চাচাতো ভাই-বোন সড়কের পাশে ডোবায় পড়ে মারা যায়। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। পরিবারের সদস্যদের সচেতনতার অভাবে গত কয়েক মাসের মধ্যে পানিতে ডুবে ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারিভাবে প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি।
গত ২৫ জুলাই প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নেত্রকোনার ১০টি উপজেলায় গত আড়াই বছরে, অর্থাৎ ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত অন্তত ২১৫টি শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। এর মধ্যে শুধু গত জুলাই মাসেই ৭টি উপজেলায় অন্তত ১৬টি শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। যেসব শিশু মারা গেছে, তাদের বয়স ১৮ মাস থেকে ১১ বছরের মধ্যে। বেশির ভাগ শিশুই বাড়ির সামনে, পেছনে বা পাশের গর্তে জমে থাকা বৃষ্টির পানি, পুকুর, ডোবা (ছোট জলাশয়) ও নদীতে ডুবে মারা গেছে। এসব মৃত্যুর ঘটনা সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে বেশি হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘরের লোকজন কাজে ব্যস্ত থাকেন। তখন তাঁরা শিশুরা কোথায় খেলছে, অনেক সময় খেয়াল করেন না। আর দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সময়ে যখন পরিবারের সদস্যরা বিশ্রাম করেন, তখন শিশুরা খেলতে বের হয় আর দুর্ঘটনার শিকার হয়।
নেত্রকোনা জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন অভিজিৎ লোহ প্রথম আলোকে বলেন, শিশুদের সাঁতার না জানা, তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসাজ্ঞান না থাকাসহ সচেতনতার অভাবে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই কমিউনিটি সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।