কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে বিক্রির জন্য আনা রুপালি ইলিশ। আজ সকালে
কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে বিক্রির জন্য আনা রুপালি ইলিশ। আজ সকালে

মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা শুরু, শেষ মুহূর্তে ১০০ মেট্রিক টন ইলিশ গেল ঢাকায়

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে আজ রোববার মধ্যরাত থেকে। এরই মধ্যে গভীর সাগর থেকে ট্রলারগুলো ঘাটে ফিরে আসতে শুরু করেছে। সঙ্গে নিয়ে আসছে ইলিশসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। আজ সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৯টি ট্রাকে অন্তত ১০০ মেট্রিক টন ইলিশ ঢাকার বাজারে সরবরাহ করা হয়েছে বলে কক্সবাজার ফিশারিঘাট সূত্রে জানা যায়।

এর আগে গতকাল শনিবার শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারিঘাট থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ৪৮ মেট্রিক টন ইলিশ। ট্রলারমালিক ও জেলেরা জানান, আজ বেলা আড়াইটা পর্যন্ত বাঁকখালী নদীর ঘাটে ভিড়েছে অন্তত দেড় হাজার ট্রলার। কমবেশি সব ট্রলারে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। তবে ৯০ শতাংশ ইলিশ ৩৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের হওয়ায় মাছের চড়া মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলেরা।

আজ সকাল ১০টায় বাঁকখালী নদীর ফিশারিঘাটের পাইকারি মাছ বিক্রির মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে মাছবোঝাই কয়েক শ ট্রলার। ট্রলার থেকে আহরিত মাছ ছোট ছোট নৌকায় তুলে বিক্রির জন্য মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ইলিশ কিনে ঢাকায় পাঠানোর জন্য ট্রাক বোঝাই করছেন।

ফিশারিঘাটে ৩৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ১০০টি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। প্রতিটি ইলিশের দাম পড়ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। এর বেশি ওজনের ইলিশ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বাজারে এই ইলিশ প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

নিষেধাজ্ঞা শুরুর কারণে যেসব ইলিশ ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না, সেসব ইলিশ কক্সবাজারের বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সদস্য জয়নাল আবেদীন প্রায় ২ মেট্রিক টন ইলিশ কিনেছেন। তিনি বলেন, আজ এক দিনে ঢাকায় প্রায় ১০০ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানো হয়েছে। এখনো ঘাটে বিপুল ইলিশ ট্রাক বোঝাই করা হচ্ছে। রাত ১২টার পর এই ইলিশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে। তখন ব্যবসায়ীদের আমও যাবে ছালাও যাবে। লোকসানের আশঙ্কায় বহু ব্যবসায়ী ইলিশ কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে এই ইলিশ বিক্রি হবে।

সকালে ফিশারিঘাটে ২ হাজার ৫০০ ইলিশ বিক্রি করে ১৪ লাখ টাকা পেয়েছেন এফবি আলম নামের একটি ট্রলারের ২০ জন জেলে। ট্রলারের মালিক শামশুল আলম বলেন, সব কটি ইলিশের ওজন ৩৫০-৫০০ গ্রাম। ওজন গড়ে ৭০০ গ্রাম হলে দাম পাওয়া যেত দুই গুণ।

তিন হাজার ইলিশ বিক্রি করে নুনিয়াছটার গিয়াস উদ্দিনের একটি ট্রলারের জেলেরা পেয়েছেন ২১ লাখ টাকা। গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘টানা দুই মাস সাগরে ইলিশের নাগাল পাননি জেলেরা। গত শুক্রবার থেকে বিপুল ইলিশ ধরা পড়া শুরু হয়েছে। আজ মধ্যরাত থেকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার কারণে এই ইলিশ আহরণ সম্ভব হবে না। এখন কম দামে সব ইলিশ বিক্রি করে দিতে হয়েছে। ফলে জেলেরা লাভবান হতে পারছেন না।’

কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই গভীর সাগর থেকে সব ট্রলার ঘাটে ফিরে আসবে। ইতিমধ্যে ৩ হাজারের বেশি ট্রলার ঘাটে ভিড়েছে। জেলায় মাছ ধরার ছোট–বড় ট্রলার রয়েছে ৫ হাজার ৬০০টি, জেলের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ।    

নিষেধাজ্ঞার সময় মৎস্য বিভাগ, নৌ পুলিশের পাশাপাশি সাগরে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড তৎপর থাকবে জানিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় জেলার নিবন্ধিত ৬৩ হাজার ১৯৩ জন জেলেকে দুই দফায় ৮৬ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে।