পানির সংকটে বেশির ভাগ জমি অনাবাদি পড়ে আছে। যেসব জমিতে ধানের চারা লাগানো হয়েছে, সেগুলোতে ধরেছে ফাটল
পানির সংকটে বেশির ভাগ জমি অনাবাদি পড়ে আছে। যেসব জমিতে ধানের চারা লাগানো হয়েছে, সেগুলোতে ধরেছে ফাটল

সেচ বন্ধ, বোরো আবাদ নিয়ে বিপাকে কৃষক

ফলপাকর মৌজায় শতাধিক কৃষকের প্রায় ৫০ একর জমি রয়েছে। এসব জমিতে প্রতি মৌসুমে কয়েক হাজার মণ বোরো ধান হয়।

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচযন্ত্র বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পানির অভাবে জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। যাঁরা ইতিমধ্যে জমি প্রস্তুত ও ধানের চারা রোপণ করেছেন, পানির অভাবে তাঁরাও পড়েছেন বিপাকে।

ধানের জমিতে এমন দুরবস্থা উপজেলার গাঁওদিয়া ইউনিয়নের ফলপাকর গ্রামে। কৃষকদের দাবি, ওই এলাকায় প্রায় ৫০ একর জমি রয়েছে। এবার ধান আবাদ করতে না পারলে জমির লগ্নি, জমি প্রস্তুত ও ধান লাগানো বাবদ বড় অঙ্কের অর্থ লোকসান গুনতে হবে তাঁদের।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফলপাকর মৌজায় শতাধিক কৃষকের প্রায় ৫০ একর জমি রয়েছে। এসব জমিতে প্রতি মৌসুমে কয়েক হাজার মণ ধান হয়। বোরো মৌসুমে ওই এলাকার কৃষকদের কথা বিবেচনা করে বিএডিসি দুটি গভীর সেচযন্ত্র স্থাপন করেছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০ বছর আগে স্থানীয় আবদুল করিম শেখ ফলপাকর ব্লকে সেচকাজের দায়িত্ব নেন। যার মাধ্যমে এখানকার কৃষকেরা ধান আবাদ করে আসছিলেন। গত বছর কৃষি মৌসুম শেষে একটি সেচযন্ত্রের পাশের জমির মালিক জাহাঙ্গীর ব্যাপারী বালু ভরাট করে নেন। এতে গভীর নলকূপসহ পানিপ্রবাহের নালা বন্ধ হয়ে যায়। অন্য আরও একটি দিয়ে করিম শেখ নিজেই পানি তোলা বন্ধ করে দেন। এতে জমির সেচ পুরোপুরিভাবে বন্ধ রয়েছে।

গত শনিবার দেখা যায়, একরের পর একর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। জমি শুকিয়ে আছে। জমির পাশে করা বোরো ধানের চারা লালচে হয়ে মরতে শুরু করেছে। কয়েকটি জমিতে চারা লাগানো হলেও পানি না থাকায় মাটি ফেটে আছে। পানির অভাবে জমিতে আবাদ করা চারাও মরতে শুরু করেছে।

জমির পাশে হাঁটাহাঁটি করছিলেন কৃষক মোশাররফ শেখ (৬০)। এ মৌজায় ৭০ শতাংশ জমি রয়েছে তাঁর। মোশাররফ শেখ বলেন, জমি থেকে বোরো মৌসুমে যে ধান হয়, তা দিয়ে তাঁদের সারা বছর সংসার চলে। জমিতে বোরো ধান লাগানোর জন্য ৭ হাজার টাকা খরচ করে ধানের চারা উৎপাদন করেছেন। ২০ হাজার টাকা খরচ করে গত ১৫ দিন আগে জমি পরিষ্কার, সার ও চাষ দিয়ে প্রস্তুত করেছিলেন। তবে সেচের পানির ব্যবস্থা না থাকায় ধান লাগাতে পারছেন না তিনি।

এলাকার আরেক কৃষক টিপু শেখ। জমি ইজারা নিয়ে ধান চাষ করেন। এবার ৯৪ শতাংশ জমি ইজারা ও চাষের জন্য প্রস্তুত করেছেন। আক্ষেপ করে টিপু বলেন, পাম্পের জায়গা নিজের দাবি করে জাহাঙ্গীর শেখ একটি পাম্প বন্ধ করে দিয়েছেন। লাভ কম হবে, তাই করিম শেখ অন্য পাম্পটি বন্ধ করে রেখেছেন। সময়মতো ধানের আবাদ করতে না পারলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর ব্যাপারী বলেন, ‘আমি আমার জমি ভরাট করেছি। করিম শেখ ডিপ চালাতে চাইলে আশপাশের অন্য কোনো জমিতে বসিয়ে চালাতে পারেন।’

অপর সেচযন্ত্রের মালিক করিম শেখ বলেন, ‘একটি যন্ত্র চালালে এক পাশের কয়েকজন কৃষক সুবিধা পাবে। অন্য পাশ অনাবাদি থেকে যাবে। মেশিন চালাতে যে খরচ হবে, তা উঠবে না। তাই চালাতে পারছি না। দুটি সেচ চালু করতে পারলে খরচ পোষাবে, কৃষকও উপকৃত হবে। তাই প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’

ফলপাকর গ্রামের উৎপাদিত ধান উপজেলার মোট উৎপাদিত ধানের বড় একটা অংশ বলে জানান লৌহজং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সেচযন্ত্র দুটি সচল করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি।’