দাকোপের ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে গতকাল কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসন মিলে প্রথমে বালু দিয়ে জিও টিউব নির্মাণ করে পরে মাটি কেটে বাঁধটি মেরামত করে। শনিবার দাকোপের খোনা গ্রামে
দাকোপের ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে গতকাল কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসন মিলে প্রথমে বালু দিয়ে জিও টিউব নির্মাণ করে পরে মাটি কেটে বাঁধটি মেরামত করে। শনিবার দাকোপের খোনা গ্রামে

দাকোপে বাঁধ ভেঙে তলিয়েছে শত শত বিঘার আমন ধান, স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত

অমাবস্যায় নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় খুলনার দাকোপ উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ভেঙে শত শত বিঘার আমন ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে পানখালী ইউনিয়নের খোনা গ্রামে পানি প্রবেশ করে।

পরে গতকাল ও আজ শনিবার চেষ্টা চালিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধটি মেরামত করেন স্থানীয় লোকজন। এরপরও বাঁধের আশপাশ ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় স্থানীয়দের শঙ্কা কাটছে না।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে দাকোপ উপজেলা। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে ৩১ নম্বর পোল্ডারের আওতায় পড়েছে পানখালী ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন এবং চালনা পৌরসভা। সপ্তাহখানেক আগে থেকে পানখালী ইউনিয়নের খোনা মোল্লাবাড়ির সামনে ঢাকী নদী ও ভদ্রা নদীর মিলনস্থলের কাছাকাছি তীরের পাউবোর বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। বাঁধের ৮০ শতাংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন মাটি দিয়ে সেটা কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছিলেন। গতকাল দুপুরের ভরা জোয়ারে মুহূর্তের মধ্যে মূল বাঁধের প্রায় ৪৫ ফুট ঢাকী নদীতে চলে যায়। এরপর জোয়ারের পানি হু হু করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এর আগেও কয়েকবার একই জায়গায় বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকেছে।

পানখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকী ও ভদ্রা নদীর মুখের কাছে বাঁধের ওই জায়গার পেছনে একটা বড় রকমের গর্ত ছিল। সামনের দিকটাও সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ দেবে যায়। গতকাল শুক্রবার পুরোটাই বিলীন হয়ে এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে।

রাশেদুল ইসলাম আরও বলেন, গতকাল ও আজ চেষ্টা চালিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধটি মেরামত করে পানি আটকানো সম্ভব হয়েছে। তবে এরই মধ্যে এলাকার প্রায় ২ হাজার বিঘা আমন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। খোনা গ্রামের অনেক বাড়িতে এক থেকে দেড় হাত করে পানি উঠেেছে। এখন জলকপাট (স্লুইসগেট) দিয়ে পানি সরানো হচ্ছে। তবে উৎকণ্ঠা এখনো কাটেনি। কারণ বাঁধের আশপাশ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ।

স্থানীয় বাসিন্দা ইমরান শেখ বলেন, পানি ঢুকে যাওয়ায় এলাকায় সদ্য লাগানো আমন ফসল সব তলিয়ে গেছে। আপাতত খোনা গ্রামটাতে পানি উঠেছে। বাঁধ না বাঁধলে আশপাশের গ্রামেও পানি ঢুকত। এ জন্য এলাকাবাসীর পাশাপাশি অন্য গ্রামের লোক এসে বাঁধ মেরামতে কাজ করেন।

গত কয়েক মাসে ৩১ নম্বর পোল্ডারের কাজীবাছা, শিবসা, ঢাকী নদীর বিভিন্ন জায়গার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। গত মে মাসে বটবুনিয়া বাজার-সংলগ্ন ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়।

পাউবো ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশকে নির্মিত ৩১ নম্বর পোল্ডারের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। সারা বছরই জোড়াতালি দিয়ে কাজ চলে। মাঝেমধ্যে সেগুলো ভেঙে যায়। স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে সেগুলো বেঁধে ফেলেন। ওই পোল্ডারের বাঁধ নির্মাণে মন্ত্রণালয়ে নকশা ও পরিকল্পনা পাঠানো আছে। অন্যদিকে ৩১ নম্বর পোল্ডারে জাইকার অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৭৫০ মিটার স্থায়ী নদীশাসনের কাজ চলমান।

খুলনা পাউবোর সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ-২-এর উপসহকারী প্রকৌশলী (পুর) গোপাল কুমার দত্ত আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অমাবস্যার প্রভাবে নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় জোয়ারের প্রভাবে বাঁধের প্রায় ৪৫ ফুট এলাকা ভেঙে যায়। আমরা বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়েছিলাম। স্থানীয় মানুষের সহায়তায় বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়েছে। আজ জোয়ারে আর ভেতরে পানি ঢোকেনি। আশপাশের এলাকায় যে ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’