জামালপুরের শতাধিক মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে জমি দখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

জামালপুরের বেসরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য জমি দখলের অভিযোগে মানববন্ধন। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের নাওভাঙ্গাচর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের বেসরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য শতাধিক দরিদ্র মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে বালু দিয়ে ভরাট করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে শহরের ফৌজদারি মোড়ে ‘নাওভাঙ্গাচরের সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরে ভরাট করা জমিতে মানববন্ধন হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত দেড় শতাধিক পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।

২০১৩ সালে জামালপুর শহরের নয়াপাড়া পাঁচরাস্তা মোড় এলাকার একটি ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজম। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়। ২০১৯ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় নাওভাঙ্গাচর এলাকায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ওই ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য নাওভাঙ্গাচরের দেড় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ করা হয় মানববন্ধন থেকে।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে আবুল কালাম, জোসনা বেগম, হালিমা বেগম, শেখ ফরিদ, আবদুল হালিম, জাহানারা বেগম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, জামালপুর শহরের ফৌজদারি মোড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে নাওভাঙ্গাচরের অবস্থান। সেখানে প্রায় ৪০ বছর ধরে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করছিল। ওই গ্রামের পশ্চিম অংশটুকু নদীতে ভেঙে যায়। বর্ষায় পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে সেখানে বালুর চর থাকত। ২০১৯ সাল থেকে হঠাৎ করেই ওই জেগে ওঠা বালুর চরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য বালু ভরাট শুরু হয়। ভরাটের একপর্যায়ে পূর্ব পাশের নাওভাঙ্গাচরের দরিদ্র বাসিন্দাদের জমিতেও বালু ফেলা শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই এলাকার দেড় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে জমিগুলো দখলে নেওয়া হয়।

জামালপুরের নাওভাঙ্গাচরের দেড় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের ফৌজদারি এলাকায়

বক্তারা আরও বলেন, মির্জা আজমের নির্দেশে জামালপুর পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জমিগুলো দখল করেন। যাঁরা সহজে জমি ছাড়েননি, তাঁদের ওপর প্রায় প্রতিদিন ব্যাপক মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হতো। জমির কোনো টাকাও দেওয়া হয়নি। ওই সময় পুলিশ দিয়েও ব্যাপক হয়রানি করা হয়। দরিদ্র মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে জোরপূর্বক জমি দখল করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য বালু ফেলে ভরাট ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারের জমি ফেরত ও ক্ষতিপূরণের দাবি করা হয় মানববন্ধন থেকে।

মির্জা আজম ও মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন পলাতক থাকায় এসব অভিযোগের ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান বলেন, ‘ওই এলাকায় যাঁরা জমি হারিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন, তাঁরা যদি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখব। সেখানে যদি তাঁদের জমি থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’