কখনোই নিজের সম্পদ অন্যকে লুট করতে দেবেন না: সুলতানা কামাল

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হাওর, নদী ও কৃষিজমি রক্ষার দাবিতে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখছেন সুলতানা কামাল। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার বারেকটিলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

প্রকৃতির যা কিছু সম্পদ আছে, সবকিছুর মালিক জনগণ, এই সম্পদ জনগণকেই রক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘আমার হাওর, নদী, জমি আমাকেই রক্ষা করতে হবে।’

সুনামগঞ্জে হাওর, নদী ও কৃষিজমি রক্ষার দাবিতে আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে জেলার তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের বারেক টিলাসংলগ্ন বালুচরে এই জনসভা হয়। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং স্থানীয় বাদাঘাট ও বড়দল উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) যৌথভাবে এই জনসভার আয়োজন করে। সুলতানা কামাল ধরার উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি।

জনসভায় উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্দেশে সুলতানা কামাল বলেন, ‘কখনোই নিজের সম্পদ অন্যকে লুট করতে দেবেন না, লুটেরাদের সঙ্গে যাবেন না। সততার সঙ্গে নিজের সম্পদ রক্ষা করুন। আপনারা এখানকার সন্তান, এ অঞ্চল আপনাদের জীবিকা উপার্জনের সুযোগ তৈরি করে দেয়। কাজেই এ অঞ্চলটা আপনাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারাও এই অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনাদের শক্ত করে বলতে হবে, এ জায়গার কোনো ক্ষতি করা চলবে না, এ জায়গায় এমন কোনো কর্মকাণ্ড চলতে দেওয়া যাবে না, যা আমাদের রিজিক কেড়ে নেবে।’

প্রকৃতির সঙ্গে যাঁরা অপকর্ম করছেন, তাঁদের রুখতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘প্রকৃতির সঙ্গে যাঁরা অপকর্ম করছেন, কিছু কিছু জায়গায় তাঁরা আমাদের চেয়েও হয়তো বেশি শক্তিশালী। কিন্তু দেশের মালিক হচ্ছে এ দেশের জনগণ। কাজেই পরিষ্কারভাবে নিজে মালিকের দায়িত্ব পালন করবেন এবং নদী, হাওর ও কৃষিজমি রক্ষায় উদ্যোগ নেবেন। যখন আমরা প্রকৃতির সঙ্গে শত্রুতা করি, তখন প্রকৃতিও কিন্তু তার সম্পদ না দিয়ে বরং আমাদের আরও সংকটের দিকে ঠেলে দেয়।’

সভার প্রধান আলোচক শরীফ জামিল তাঁর বক্তব্যে বলেন, ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর বর্ষায় এ অঞ্চলে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে ব্যাপক বালু ও পাথর এসে হাওর, নদী, ছড়া ও কৃষিজমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির এই বড় বিপর্যয় এ অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। যন্ত্র দিয়ে অপরিকল্পিত বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে ছাড়া ও কৃষিজমি পুনরুদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারতের মেঘালয়ে অপরিকল্পিত খনিজ সম্পদ আহরণের ফলে ঢলের সঙ্গে আসা বালু ও পাথরে যাদুকাটা নদী ও টাঙ্গুয়ার হাওরের তলদেশ ভরাট বন্ধ করতে আন্তর্দেশীয় পদক্ষেপ দ্রুততার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে।

বাদাঘাট ইউপির চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান আলোচক ছিলেন ধরার আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী, ধরার নির্বাহী কমিটির সদস্য ও আদিবাসী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সিলেট বিভাগীয় আঞ্চলিক সমন্বয়ক ফাদার জোসেফ গোমেজ, ধরার নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক আবদুল করিম চৌধুরী। এ ছাড়া সভায় আলোচক ছিলেন বালিজুরী ইউপির চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন, বড়দল উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাসুক মিয়া, ইউপি সদস্য নোয়াজ আলী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ‘হাওর রক্ষায় আমরা’-এর সমন্বয়ক তোফাজ্জল সোহেল।

এর আগে অতিথিরা উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের গোলাবাড়ি এলাকায় যান। সেখানে হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় করণীয় নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।