চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ সময় আহত এক তরুণ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন। সংঘর্ষের ওই ঘটনায় আহত হন আরও ৩০ জন।
এ ঘটনায় এখনো হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান করছেন। হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাতেই হাজীগঞ্জ বিএনপি, পৌর বিএনপি, হাজীগঞ্জ যুবদল ও ছাত্রদলের সব ইউনিট কেন্দ্র থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ।
নিহত ব্যক্তির নাম সায়মন (২০)। সায়মন হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বিলবাড়িয়ার মো. ইউনুসের ছেলে। তবে তিনি কোন পক্ষের লোক, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দলের নেতা-কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাজীগঞ্জ বাজার, বাস ও সিএনজিস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি নিয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইমাম হোসেন ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সেলিম মিজির মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। একে কেন্দ্র করে হাজীগঞ্জ বাজারে দুই পক্ষের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত একটায় উত্তেজনা ও সংঘর্ষ হয়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুরো বাজারের লোকজন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কেও কয়েক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
হাজীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ২০ জন আহত রোগী আসেন। তাঁদের মধ্যে শাহাদাত (২২), সায়মন ও আহসানকে (৪০) গুরুতর অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে সায়মনকে ঢাকায় নেওয়া হয়। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান বলে তাঁরা জেনেছেন।
তবে এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইমাম হোসেন বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি বা দখলবাজির যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা মিথ্যা। তবে শুক্রবার যে ঘটনা ঘটেছে সেটা এক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হয়েছে। এ বিষয়ে পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সেলিম মিজির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে রাতে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাজারে গিয়ে তাঁরা পরিবেশ শান্ত করেছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন ও পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রকিব উদ্দিনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। শনিবার বিকেলে সংঘর্ষে আহত পারভেজের স্ত্রী তুহিন বেগম বাদী হয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করে হাজীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তাঁরা এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
এক রাতেই সব কমিটি বিলুপ্ত
শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের সুস্পষ্ট অভিযোগে হাজীগঞ্জ উপজেলার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সব কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে পৃথক তিনটি চিঠির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুর জেলা বিএনপি সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হলো। পরে নতুন দুটি কমিটি ঘোষণা করা হবে।
একই রাতে চাঁদপুর জেলার অধীনস্থ হাজীগঞ্জ উপজেলা যুবদল, পৌর যুবদল এবং তাঁদের অধীন ইউনিট ও ওয়ার্ডসহ সব কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটি। যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হলো।
আরেকটি চিঠিতে হাজীগঞ্জ উপজেলা, পৌর, কলেজ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ছাত্রদলের সব কমিটির বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর চিঠিতে বলা হয়, হাজীগঞ্জ উপজেলা, পৌর, কলেজ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ছাত্রদলের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় তা বিলুপ্ত করা হলো।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।