বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের তোড়ে উল্টে যাওয়া পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ট্রলারটির পাঁচজন জেলের খোঁজ তিন দিনেও পাওয়া যায়নি। ট্রলারটির বাকি সাত জেলেকে উদ্ধার করেছেন অন্য ট্রলারের জেলেরা। ফিরে এসে তাঁদের একজন জানিয়েছেন রাতের অন্ধকারে মাঝসমুদ্রের বুকে লড়াই করে বেঁচে থাকার গল্প।
গত রোববার রাত সোয়া ১১টার দিকে বঙ্গোপসাগরের নারকেলবাড়িয়া এলাকায় এফবি ভাই ভাই নামের মাছ ধরার ট্রলারটি ঢেউয়ের ধাক্কায় উল্টে যায়। এরপর ট্রলারটি সাগরে ভাসতে থাকে। ট্রলারে থাকা ১২ জেলের মধ্যে ৭ জন ট্রলারের নিচে আটকা পড়েন। আর পাঁচ জেলে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যান। এ সময়ে ট্রলারের মালিক নজরুল ইসলাম মাঝিও জেলেদের সঙ্গে ট্রলারের নিচে আটকা পড়েছিলেন।
আজ বুধবার সকালে নজরুল ইসলাম মাঝি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৬ জুন বিকেলে মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী বাজার থেকে তিনিসহ ১২ জন জেলে ও মাঝি মাছ ধরার জন্য ট্রলারে করে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে রওনা দেন। পরদিন তাঁরা সাগরে মাছ ধরা শুরু করেন। রোববার রাতে তাঁরা সাগরের নারকেলবাড়িয়া এলাকায় মাছ ধরছিলেন। রাত সোয়া ১১টার দিকে হঠাৎ একটি বড় ঢেউ এসে ট্রলারে আঘাত করলে সেটি উল্টে যায়। এতে ট্রলারে থাকা ১২ জন জেলে ও মাঝির মধ্যে ৭ জন ট্রলারের নিচে ও ৫ জন পানিতে পড়ে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যান। নজরুল ইসলাম ট্রলারের নিচে আটকা পড়েন। তিনি ট্রলারের নিচ থেকে বের হয়ে অন্য জেলেদের সেখান থেকে বের করে আনেন।
এরপর সাত জেলে উল্টে ভেসে থাকা ট্রলারটি ধরে ভাসতে থাকেন। অন্ধকারের জন্য আশপাশের মাছ ধরা ট্রলারগুলো তাঁদের দেখতে পায়নি। এভাবে সাড়ে তিন ঘণ্টা ভেসে থাকার পর কাছ থেকে একটি মাছ ধরার ট্রলার যেতে দেখে জেলেরা চিৎকার করে ডাকতে থাকেন। রাত তিনটার দিকে ওই ট্রলার গিয়ে ভেসে থাকা সাত জেলেকে উদ্ধার করে। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে তাঁদের পটুয়াখালীর মহীপুর মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে আনা হয়।
উদ্ধার হওয়া জেলেরা হলেন মঠবাড়িয়া উপজেলার ছোট মাছুয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম মাঝি, মোশারেফ শাহ, রুহুল আমিন, রাসেল ফরাজী, সালাম খান, লোকমান মোল্লা ও ইলিয়াস খলিফা। মহীপুরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। নিখোঁজ জেলেরা হলেন ছোটমাছুয়া গ্রামের এমাদুল হক আকন, আল আমিন শাহ, বাহাদুর আকন, জুয়েল শাহ ও ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর জুনিয়া গ্রামের আবদুর রহমান।
নজরুল ইসলাম মাঝি বলেন, ‘আমিসহ সাতজন উল্টে যাওয়া ট্রলারের নিচে পড়ে যাই। এরপর প্রথমে আমি সেখান থেকে বের হয়ে এসে অন্যদের বের করি। জেলেদের ট্রলারের নিচ থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে আমার শরীরে কয়েক জায়গায় কেটে গেছে। সাতজনকে উদ্ধারের পর পাঁচ জেলেকে আর খুঁজে পাইনি। আমাদের ট্রলারটি উল্টে গেলেও কিছু অংশ ভেসে ছিল। ভেসে থাকায় ট্রলারটির ধরে আমরা সাতজন ভাসতে থাকি। দীর্ঘ সময়ে সাগরে ভেসে থাকায় ঢেউয়ে মুখে নোনাপানি ঢুকে যায়। আমরা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। সময়মতো আমাদের উদ্ধার করা না হলে ক্লান্ত শরীর নিয়ে হয়তো বেশিক্ষণ ভেসে থাকা যেত না।’
উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারের জন্য নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে জানিয়েছেন তাঁরা।