রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেছেন, আজ পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের যেকোনো সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন। এরপরই ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে।
আজ মঙ্গলবার পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শেষ হওয়ার পর মাওয়া স্টেশনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন রেলমন্ত্রী। বেলা ১টা ১৮ মিনিটে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ৭টি বগির একটি বিশেষ ট্রেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ নিয়ে পদ্মা সেতুর দিকে রওনা হয়। সেতু পাড়ি দিয়ে বেলা সোয়া তিনটার দিকে ওই ট্রেন মাওয়া স্টেশনে পৌঁছায়। এ সময় সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর পিয়ারের কাছে ও মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর পিয়ারের কাছে প্রকল্পের কর্মকর্তা ও শ্রমিকেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আতশবাজি ফোটান।
এরপর মাওয়া স্টেশনে প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে ব্রিফিং করেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম। এ সময় চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান, ইকবাল হোসেন, নাহিম রাজ্জাক ও সাগুপ্তা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুতে রেল চালানো হয়েছে। ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার পথ আমরা অতিক্রম করেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেপ্টেম্বরের যেকোনো সময় ঢাকা-ভাঙ্গা ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। ওই মেয়াদের মধ্যেই যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। প্রকল্পের মেয়াদের আগপর্যন্ত কোনো ব্যয় বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই।’
পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা থেকে যশোর। কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩০ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা থেকে মাওয়া ৭৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশে ৯২ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। পুরো ঢাকা-যশোরের এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকার কমলাপুর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার অংশে ট্রেন চলাচল করবে।
যাত্রীদের ট্রেনে চলাচলের জন্য ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত ৪টি স্টেশন ও ১টি জংশন স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভাঙ্গা স্টেশনের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ, ভাঙ্গা জংশন স্টেশনের অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ, শিবচর জংশন স্টেশনের অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ৫০ শতাংশ, পদ্মা স্টেশনের অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও মাওয়া স্টেশনের অগ্রগতি হয়েছে ৮৯ শতাংশ।
পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের মাওয়া স্টেশন থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব রেলপথে ৪২ কিলোমিটার। মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথের ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর আগে গত বছর ১ নভেম্বর ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার রেললাইনে রেল চালানো হয়।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় রেল লিংক প্রকল্পের অধীনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের ঠিকাদার চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)।
রেল লিংক প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প ব্যয় এখন পর্যন্ত বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগামী বছর ছাড়া বলা যাবে না। আগামী জুন মাসের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ করার আমাদের যে সময় নির্ধারণ করা আছে, এটি তখন বলা যাবে, এটার ব্যয়ে আরও কোনো যুক্ত হবে কি না।’ নতুন এ পথে রেলের ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রুটে আমাদের রেল চলাচল করে। সেটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যা ভাড়া হয়, তাই নির্ধারণ করা হবে।’