চার মাসে অন্তত ২ হাজার একর প্যারাবন দখল করে সেখানে ৩৭টির বেশি চিংড়িঘের তৈরি করা হয়েছে।
কক্সবাজার শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ছোট্ট দ্বীপ সোনাদিয়া। লাল কাঁকড়া, কাছিম ও বিরল পাখির কারণে সুপরিচিত এই দ্বীপে দুই দফায় গত মার্চ ও মে মাসের শুরুতে গিয়ে দেখা যায়, খননযন্ত্র দিয়ে ঘের তৈরির কাজ চলছে। কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। উদ্দেশ্য চিংড়ি চাষ।
সরেজমিনে গত ৩০ মে আবার দেখা যায়, চিংড়িঘেরগুলোর কাজ প্রায় শেষ। চলতি মাসের শেষ দিকে পানি ঢুকিয়ে ঘেরে চিংড়ির পোনা ছাড়া হবে।
অথচ সোনাদিয়া দ্বীপটিকে ২০০৬ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। মানে হলো, সেখানকার মাটি, পানি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো পরিবর্তন করা যাবে না।
দ্বীপের বাসিন্দা ও পরিবেশ রক্ষায় আন্দোলনকারীরা বলছেন, দ্বীপটিতে গত চার মাসে নতুন করে অন্তত ২ হাজার একর প্যারাবন দখল করে ৩৭টির বেশি চিংড়িঘের তৈরি করা হয়েছে। কেটে ফেলা হয়েছে ছোট ও বড় ২২ লাখের বেশি বাইন, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এর সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ ও দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এবং স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। চিংড়িঘেরগুলো দেশীয় বন্দুকসহ পাহারা দেওয়া হয়।
ঘেরের দখল নিয়ে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। গত মার্চে দুই দখলদারের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সোনাদিয়ায় চিংড়ি চাষ করলেও দলের কিছু নেতা এ নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে একজন দলটির কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা। তাঁর বাড়ি মহেশখালীতে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দখলদার কারা, সেটা সবাই জানেন। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি। দ্বীপের অধিগ্রহণ করা জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নিয়ন্ত্রণে নেই।
সোনাদিয়া দ্বীপে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার শর্তে সরকার ২০১৭ সালে পুরো দ্বীপ (৯ হাজার ৪৬৭ একর) মাত্র ১ হাজার ১ টাকা সেলামিতে বেজাকে বরাদ্দ দেয়। সাত বছরে কিছু অংশে মাটি ভরাট ও আনসার সদস্যদের থাকার ব্যারাক নির্মাণ ছাড়া কোনো কাজ হয়নি। বেজা সূত্র জানিয়েছে, সোনাদিয়ায় ইকো-ট্যুরিজম পার্কটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে করবে তারা। তবে এখনো সেটার দরপত্র হয়নি। প্রস্তুতিও নেই।
বেজা দ্বীপের জমি বরাদ্দ নেওয়ায় হাত গুটিয়ে নিয়েছে বন বিভাগ। কিছু বলছে না পরিবেশ অধিদপ্তর। স্থানীয় প্রশাসন নামকাওয়াস্তে কিছু অভিযান চালায়, তাতে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে প্রভাবশালীরা। দ্বীপটিতে সহজে যাওয়ার জন্য ২০০৪ সালে স্থানীয় একটি নদীতে সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত সেখানে সংযোগ সড়ক হয়নি। এই সুযোগে দুর্গম এলাকার অজুহাত তুলে দায় এড়িয়ে যায় সরকারি সংস্থাগুলো।
সরেজমিনে যা দেখা গেল
মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড সোনাদিয়া। সেখানে ৩৩৪ পরিবারের প্রায় ১ হাজার মানুষ বাস করে। প্রাণবৈচিত্র্যে ভরপুর এই দ্বীপের উত্তর-পূর্ব দিকে দেশের একমাত্র ঘন ও সবুজ প্যারাবন (ম্যানগ্রোভ) এবং পশ্চিম, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে সমুদ্রসৈকত। সরকারের সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) ২০১৯ সালে এক সমীক্ষায় জানিয়েছিল, সোনাদিয়া দ্বীপে বিশ্বজুড়ে মহাবিপন্ন তিন প্রজাতির পাখি আছে। এর একটি চামচঠুঁটো বাটন। এ ছাড়া দ্বীপে আছে অনেক বিপন্ন জলপাই সবুজ ও সামুদ্রিক সবুজ কাছিম। দ্বীপের আশপাশের সমুদ্রে থাকে ইরাবতী, ইন্দো প্যাসিফিক ও পাখনা ছাড়া ডলফিনেরা। দ্বীপের প্রধান শ্বাসমূলীয় গাছ হচ্ছে বাইন ও কেওড়া, আছে কেয়া।
কক্সবাজার শহর থেকে সোনাদিয়ায় যাতায়াতের সরাসরি লঞ্চ কিংবা ট্রলার নেই। স্পিডবোট ভাড়া করে যেতে হয়। বেশির ভাগ মানুষ মহেশখালীর গোরকঘাটা হয়ে ১০ কিলোমিটার দূরে (পশ্চিমে) কুতুবজোমের ঘটিভাঙ্গা নদী পেরিয়ে সোনাদিয়ায় পা রাখেন। এরপর কয়েক কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছাতে হয় চিংড়িঘেরের কাছে।
পাখি গণনার কথা বলে গত ১ মে প্যারাবনে গিয়ে দেখা যায়, ১০টির বেশি খননযন্ত্র দিয়ে চিংড়িঘেরের জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও প্যারাবনের গাছ উপড়ে ফেলার কাজ চলছে। একটি জায়গায় প্রায় ৩০০ একরের প্যারাবন ধ্বংস করে বিশাল চিংড়িঘের নির্মাণ করছিলেন ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ঘেরটির মালিক মহশিন আনোয়ারসহ মহেশখালী আওয়ামী লীগের ২০ থেকে ২৫ জন নেতা-কর্মী।
মহশিন আনোয়ার মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরীর ছেলে। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি। মহশিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কেন দ্বীপে চিংড়িঘের করছেন? জবাবে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিছু প্রভাবশালী প্যারাবন দখল করে চিংড়িঘের করছেন, এটা সত্য। তবে তিনি জড়িত নন। দখলদারদের কেউ তাঁদের নাম ব্যবহার করে সুবিধা নিতে পারেন।
অবশ্য দ্বীপে কাজ করা শ্রমিকেরা বলছিলেন, মাঝেমধ্যেই মহশিন সেখানে গিয়ে চিংড়িঘের তৈরির কাজের অগ্রগতি দেখে যান।
মহশিন আনোয়ারের ঘেরের দক্ষিণ পাশে প্রায় ১০০ একরে আরেকটি চিংড়িঘের করছেন মহেশখালী উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি ঘের করার বিষয়টি অস্বীকার করেননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু জমি ইজারা নিয়ে তিনি চিংড়িঘের করছেন। কোনো গাছ কাটা হয়নি।
যদিও পরিবেশ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় জমি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করা যায় না।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সোনাদিয়ায় চিংড়িঘের করছেন মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল করিম, কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নুরুল আমিন, কুতুবজোম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম এবং সোনাদিয়ার পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফারুক ও জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে থাকা ২০-২৫ জন।
সোনাদিয়ায় প্যারাবন ধ্বংসের ঘটনায় দলের নেতা-কর্মীরা জড়িত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল স্থানীয় (কক্সবাজার-২: মহেশখালী-কুতুবদিয়া) সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির আমল থেকেই সোনাদিয়ার প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়ি চাষ চলছে। আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।যদিও ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নজির নেই।
সমিতির নামেও চিংড়ি চাষ
সোনাদিয়ার কোনো কোনো জায়গায় সমবায় সমিতির নামেও চিংড়িঘের করা হচ্ছে। দ্বীপের ঘটিভাঙ্গা সেতুর দক্ষিণ-পূর্ব পাশে ঘেরের দুটি সাইনবোর্ড দেখা যায়। লেখা আছে, ঘটিভাঙ্গা পূর্ব পাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি এবং ঘটিভাঙ্গা পশ্চিম পাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি।
ঘটিভাঙ্গা পূর্ব পাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, জায়গাটি বরাদ্দের জন্য তাঁরা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। এখনো বরাদ্দ পাননি। দখল হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাঁরা চিংড়িঘের করেছেন। বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে প্যারাবনের কিছু বাইনগাছ কাটা পড়েছে।
দ্বীপের বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বীপে চিংড়িঘের করা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে মাঝেমধ্যে কিছু অভিযান চলে। কিছু জরিমানা হয়। পরে সব আগের মতো হয়ে যায়। মূল দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা করা ও তাঁদের আইনের আওতায় আনা হয় না।
উপকূলীয় বন বিভাগের মহেশখালীর গোরকঘাটা বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, সোনাদিয়ার প্যারাবন দখল করে চিংড়িঘের তৈরির হিড়িক পড়েছে। দিনদুপুরে এসব করা হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ মামলা করতে পারছে না; কারণ, ভূমির মালিক এখন বেজা।
বেজার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সোনাদিয়া দ্বীপ পাহারা দেওয়ার মতো জনবল তাঁদের নেই। দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র ৫ জন নিরাপত্তাকর্মী। সম্প্রতি ১০ জন আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বেজার চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপে চিংড়িঘের করার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি বিদেশে রয়েছেন। ফিরেই খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
সোনাদিয়া দ্বীপকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন ঘোষণা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। দ্বীপটি রক্ষায় তাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই—জানতে চাওয়া হয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক নুরুল আমিনের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বন রক্ষার কাজটি বন বিভাগের। জলাধার ধ্বংস কিংবা খাল ভরাট করে সেখানে বেড়িবাঁধ নির্মাণকারী কয়েকজনকে পরিবেশ অধিদপ্তর নোটিশ দিয়েছে। শুধু একজন নোটিশের জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, সোনাদিয়ার প্যারাবন দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। কক্সবাজার থেকে স্পিডবোট ছাড়া সেখানে যাওয়া যায় না। স্পিডবোটের ইঞ্জিনের আওয়াজ শুনলে ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই দখলদারেরা পালিয়ে যায়।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, সরকারি সংস্থাগুলো সব সময় দায় এড়ানোর মতো বক্তব্য দেয়। কারা ঘের করছে, সেটা সবাই জানে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয় না। মাঠপর্যায়ে কাজ করা শ্রমিকদের জরিমানা করা হয়। তাতে কোনো লাভ হয় না।
চিংড়িঘের নিয়ে খুনোখুনি
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সোনাদিয়ায় তৈরি করা ঘেরে এ মাসে পোনা ছাড়ার পর নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ শুরু হবে চিংড়ি ধরা ও বিক্রি। দ্বীপের ২ হাজার একরের বেশি জমিতে তৈরি করা ঘেরে অন্তত ২৫০ কোটি টাকার চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব। অভিযোগ রয়েছে, এই বড় আয়ের ভাগ অনেকেই পায়।
এদিকে সোনাদিয়া দ্বীপে চিংড়িঘের তৈরি ও প্যারাবন দখল নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। গত ২ মার্চ স্থানীয় নুরুল আজিম মিয়া বাহিনীর সঙ্গে বড় মহেশখালীর জাগিরাঘোনার জাহাঙ্গীর আলম বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষে ২ জন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ১০ জন। এই ঘটনায় ২২ জনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, পাঁচজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের ধরার চেষ্টা চলছে।
সোনাদিয়া দ্বীপে চিংড়িঘের নির্মাণের প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটছে। গত ২৩ মে সন্ধ্যায় দ্বীপের ঘটিভাঙ্গা এলাকায় স্থানীয় পরিবেশকর্মী রিদুয়ান মাহিকে মারধর করা হয়। তিনি মোহাম্মদ আকবর ও শাহেদ খান নামে দুজনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে কেউ গ্রেপ্তার হননি।
রিদুয়ান মাহি প্রথম আলোকে বলেন, বন ধ্বংসের প্রতিবাদ জানালে মারধরের শিকার হতে হচ্ছে। সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ায় তাঁর ওপর হামলা করেছে সন্ত্রাসীরা।
রিদুয়ানের ওপর হামলার দুই দিন পর ২৫ মে রাতে কুতুবজোম ইউনিয়নের বটতলি বাজারে হামলার শিকার হন সোনাদিয়ার পরিবেশকর্মী ও বেজার নিয়োগ করা নিরাপত্তাকর্মী দলের নেতা গিয়াস উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ওপর হামলার কারণও সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়া।
দুই সেতু অচল কেন
মহেশখালীর কুতুবজোম থেকে ঘটিভাঙ্গা নদী পার হয়ে সড়কপথে সোনাদিয়ায় যাওয়া যায়। তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো নয়। ২০০৬ সালে সোনাদিয়ার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঘটিভাঙ্গা নদীর ওপর দুটি সেতু নির্মাণ করে। কিন্তু সংযোগ সড়ক আর নির্মাণ করা হয়নি।
সোনাদিয়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দ্বীপে ঘের করে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে বহু বছর ধরে। ঘের করা প্রভাবশালীরাই চান না দ্বীপটিতে ভালো যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি হোক। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারবে। এতে দ্বীপে বন ধ্বংস করা বন্ধ হবে।
এলজিইডির মহেশখালী উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ কুমার দে প্রথম আলোকে বলেন, সেতু দুটির দুই পাশে চার কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। পরে বেজা সোনাদিয়া দ্বীপের ইকো-ট্যুরিজম পার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়।
এর আগের এক যুগে কেন সংযোগ সড়ক হয়নি, তার উত্তর এলজিইডির এই প্রকৌশলীর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীকি মারমাও মনে করেন, দুর্গম এলাকা হওয়ায় সোনাদিয়ায় যাওয়া কঠিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা প্রায়ই অভিযান চালান। শাস্তিও দেওয়া হয়। তবে দুর্গম এলাকা হওয়ায় দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। পৌঁছালেও ততক্ষণে দখলদারেরা পালিয়ে যায়।
আন্দোলনেও কাজ হয় না
সোনাদিয়ার প্যারাবন রক্ষার দাবিতে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ গত ২৬ মে দুপুরে মহেশখালী উপজেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে চারটি সংগঠন—সিইএইচআরডিএফ, মহেশখালী নাগরিক অধিকার আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং ইয়াসিদ। মানববন্ধন শেষে মহেশখালীর ইউএনওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
পরিবেশ রক্ষায় কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সিইএইচআরডিএফের প্রধান সমন্বয়ক রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, সোনাদিয়ার প্যারাবন উজাড় করে চিংড়িঘের তৈরি করছেন রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা। তাঁরাই বন উজাড় করছেন। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার।