মানিকগঞ্জ-২ (সিঙ্গাইর, হরিরামপুর এবং মানিকগঞ্জ সদরের একাংশ) আসনে নৌকায় ভোট না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। এমনকি তাঁদের তিনি গুলি করারও হুমকি দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহম্মেদের (টুলু) কর্মীরা প্রচারণা চালানোর সময় এসব হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
হুমকি দেওয়া ব্যক্তির নাম আলী ইস্কান্দার। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগমের সমর্থক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিকেল চারটার দিকে ইরকা গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহম্মদের অনুসারী আবদুর রাজ্জাক, মো. মিনহাজ, আমিনুর রহমান, শাহিনুর রহমান, মো. মানিকসহ কয়েকজন যুবক ট্রাক প্রতীকে ভোট চেয়ে ছোট পোস্টার বিতরণ করছিলেন। এ সময় সেখানে একটি প্রাইভেট কার নিয়ে উপস্থিত হন আলী ইস্কান্দার। এ সময় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের হাত কেটে নেওয়াসহ নানা হুমকি-ধমকি দেন।
সিঙ্গাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী ইস্কান্দারের বড় ভাই প্রয়াত আলী জিলকদ হোসেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। ১৯৯৬ সালে এই আসনে তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শামসুল ইসলাম খানের কাছে পরাজিত হন। ২০১৮ সালে আলী জিলকদ মারা যান।
বিষয়টি তুলে ধরে ভিডিও চিত্রে আলী ইস্কান্দারকে উচ্চস্বরে বলতে শোনা যায়, ‘ডা. জিলকদ নমিনেশন নিয়া আসছিল। জিলকত ভাইকে ভোট দেয় নাই। এবার আমার দেখার আছে। আমি তো ভেতরে থাকব। নৌকাকে ভোট না দিলে হাত কাইটা ফালামু। আমি ইস্কান্দার। জিলকদের ভাই আমি। জিলকদকে ভোট দেয় নাই। (বুক দেখিয়ে) এখানে ঘা, হাত কাইটা ফালামু। রেডি (প্রস্তুত) থাইকো। সাহস থাকে পাল্লা লইবা আমার লগে। কে আছে আমার অ্যাগিইনস্টে (বিরুদ্ধে) যাবে। লজ্জা করে না তোমাদের। দেখার আছে আমার। খোদার কসম, দেখার আছে এইবার। চৌদ্দ শিকে ঢুকাইয়া ছাইড়া দিমু। সরকার আমার, পাওয়ার আমার, প্রশাসন আমার, এমপি আমার। যাইও ভোট দিবার যাইও ট্রাক মার্কায়। ট্রাকের চাকার তলে ফালাই দিমু, ফাজলামো। হাড্ডি মাংস এক কইরা ফালামু। প্রত্যেকটাকে গুলি করব।’
জানতে আলী ইস্কান্দার বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা টাকা ও চকলেট বিতরণ করার খবর শুনে তিনি সেখানে যান। তাঁর ভাই প্রয়াত জিলকদ হোসেন একসময় নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে ভোট দেওয়া হয়নি। এ কারণে উত্তেজিত হয়ে অনেক কথা বলেছেন। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি বলে দাবি করেন আলী ইস্কান্দর।
হুমকির বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুসারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের হুমকি–ধমকি শুধু আচরণবিধির লঙ্ঘনই নয়, মারাত্মক অপরাধ। এ ধরনের হুমকি-ধমকিতে সাধারণ ভোটাররা শঙ্কিত হয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে তাঁরা উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছে বলে জানান সায়েদুল।
এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পলাশ কুমার বসু বলেন, ঘটনাটি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।