ব্যাংক কর্মকর্তা ছেলের মৃত্যুতে কান্না থামছে না মা নুরুন নাহারের। গতকাল বিকেলে খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা থানার আলী ক্লাব এলাকায়
ব্যাংক কর্মকর্তা ছেলের মৃত্যুতে কান্না থামছে না মা নুরুন নাহারের। গতকাল বিকেলে খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা থানার আলী ক্লাব এলাকায়

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা

ব্যাংক কর্মকর্তার মায়ের আহাজারি, ‘আমার আগে তুই চলে গেলি কেন বাজান?’

‘রাতে বলেছিল, ভোরে ঢাকায় যাবে। সেটিই ছিল আমার সঙ্গে তাঁর শেষ কথা। এখন কে এসে আমায় ‘‘মা’’ বলে ডাক দিবে। আমার কাছে ভাত খেতে চাইবে। আমার আগে তুই চলে গেলি কেন বাজান?’ বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুনের (৪২) মা নুরুন নাহার।

গতকাল রোববার সকালে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বাস ছিটকে পড়ে ১৯ জন নিহত হন। তাঁদের একজন খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা থানার আলী ক্লাব এলাকার তমিজউদ্দিন সড়কের বাসিন্দা মামুন। তিনি পূবালী ব্যাংকের ঢাকার মুঘলটলী শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার ছিলেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ১২ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন আবদুল্লাহ আল মামুন। গত ডিসেম্বরে পরিবার নিয়ে খুলনায় চলে আসেন। ১০ বছরের ছেলেকে ভর্তি করেছেন বাড়ির পাশের একটি বিদ্যালয়ে। তিনি নিজেও খুলনায় বদলি হয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন। পরিবার খুলনায় নিয়ে আসার পর প্রতি বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে খুলনায় চলে আসতেন। আবার ঢাকায় ফিরতেন শনিবার রাতে অথবা রোববার সকালে।

দাদা-দাদির সঙ্গে বসে আছে মামুনের ১০ বছরের ছেলে আবদুল্লাহ আল মুবিন

গতকাল ভোরে ইমাদ পরিবহনের একটি বাসে খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হয়েছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন (৪২)। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন তাঁর মা নুরুন নাহার। সেই থেকে তাঁর কান্না যেন থামছেই না।

গতকাল বিকেলে খুলনা নগরের তমিজউদ্দিন সড়কে মামুনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা নুরুন নাহারের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে বাড়ির পরিবেশ। বাবা শেখ মোহাম্মদ আলীও অনেকটা নির্বাক। দাদা-দাদির মাঝে বসে ছিল মামুনের ১০ বছরের ছেলে আবদুল্লাহ আল মুবিন (রাফি)। আত্মীয়স্বজনেরা এসেছেন তাঁদের সান্ত্বনা দিতে। নিচে খাটিয়া এনে রাখা হয়েছে, সবাই বসে আছেন মামুনের লাশের অপেক্ষায়।

নুরুন নাহার বলেন, ঢাকায় অফিসে না যাওয়ায় সকাল ১০টার দিকে তাঁর মোবাইল নম্বরে ফোন করেন ঢাকা অফিসের লোকজন। এরপর তিনি মামুনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেন। তখনো ফোনে রিং হচ্ছিল কিন্তু কেউ ফোন ধরছিল না। ১০-১৫ বার ফোন দিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। সাড়ে ১০টার দিকে মামুনকে গাড়িতে পৌঁছে দেওয়া অটোরিকশাচালক বাড়িতে এসে জানতে চান মামুনের কোনো খবর পাওয়া গেছে কি না। এরপর তিনি জানান, মামুন যে গাড়িতে গেছে, সেটি দুর্ঘটনায় পড়েছে। পরে তাঁরা বুঝতে পারেন মামুনের বড় কোনো বিপদ ঘটেছে।

মামুনেরা তিন ভাই, এক বোন। মামুন মেজ। বাবা শেখ মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি অবসরে যান। মোহাম্মদ আলী বলেন, খবর শোনার পর বড় ছেলে আবদুল্লাহ আল মাসুম শিবচরে যান। সেখান থেকে মামুনের লাশ নিয়ে বিকেলের দিকে বাড়ির পথে রওনা হন। লাশ আনার পর রাতেই বসুপাড়া কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।