বয়স ৮০ পেরিয়েছে। লাঠিতে ভর করে চলাফেরা করতে হয়। গায়ে শাড়ির সঙ্গে একটি ফিনফিনে চাদর। পৌষের সকালের শীতল হাওয়ায় কেঁপে উঠছিলেন তিনি। গায়ে একটি কম্বল জড়িয়ে দিতেই তাঁর যেন খুশি আর ধরে না। ফোকলা দাঁতে একগাল হাসি দিয়ে বললেন, ‘জারত (শীতে) দর দর করিয়া কাঁপিছিনু। কারোঠে কম্বল পাওনি। কম্বলখান উরিমো (গায়ে দেব), অ্যালা জার বাপ বাপ করিয়া পালাইবে।’
বৃদ্ধার নাম বালাশ্বরী। বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে বাহাদুরপাড়া গ্রামে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও বন্ধুসভার সদস্যদের সহযোগিতায় বিতরণ করা কম্বল নিতে এসেছিলেন তিনি। তাঁর মতো ২১০ জন অসহায় ও শীতার্ত মানুষকে কম্বল দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার সদর উপজেলার বাহাদুরপাড়া, জগন্নাথপুর, সিঙ্গিয়া, ভাতগাঁও, ভূতপাড়া, মণ্ডলপাড়া গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায় শীতার্ত মানুষের তালিকা তৈরি করেন। পরে তাঁদের ১৪০ জনের হাতে কম্বল বিতরণের স্লিপ তুলে দেওয়া হয়। সেই স্লিপ নিয়ে আজ শীতার্ত ও বয়স্ক নারী-পুরুষেরা বাহাদুরপাড়া গ্রামের একটি ইটভাটার পাশে কম্বল নিতে হাজির হন। যাঁরা কম্বল নিতে আসতে পারেননি, তাঁদের বাড়িতে কম্বল পৌঁছে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা। এ ছাড়া পৌর শহর ও আশপাশের কয়েকটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে ৭০টি কম্বল বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও বন্ধুসভার সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শিহাব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক রাদ শাহামাদ, সদস্য শাহরিয়ার নুর নুসরাত, সিয়ামুর রশিদ ও প্রথম আলোর ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি মজিবর রহমান খান।
বেশ কয়েক বছর ধরে শ্বাসকষ্টের সঙ্গে বাতব্যথায় ভুগছেন বাহাদুরপাড়া গ্রামের ফজিলা বেগম (৬৫)। গরম কাপড়ের সংকট থাকায় শীত এলে তাঁর সেই কষ্ট আরও বেড়ে যায়। তিনিও প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বলের স্লিপ পেয়েছেন। কম্বল পেয়ে তিনি বললেন, ‘রাইতত কাঁপুনি ওঠে। একখান কম্বলেরতানে কতঠে গেইছু। কারোঠে পাওনি। আর তোমরা হামার বাড়িত আসিয়া কম্বলের স্লিপ দিয়া গেইলেন। আইজ কম্বলখান পানু। অ্যালা রাইতত আর জার করিবেনি।’
সদর উপজেলার ভাতগাঁও গ্রামের বৃদ্ধা চাপোরানীর (৬৫) ছেলে থাকলেও শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। মায়ের খুব একটা খোঁজ রাখেন না। পেটের ক্ষুধা মেটাতে মাঠে কাজ করেন। কম্বল পেয়ে তিনি বলেন, ‘জীবনখান চালানো কঠিন হয়ে পড়িছে। চলাই যায় না। কম্বল কিনিমো যে হাতত টাকা নাই। তোমার কম্বলখান হামার খুব উপকার করিল।’
একই গ্রামের বৃদ্ধা দয়ামনিকে (৭২) কাজ করে খেতে হয়। বয়সের ভারে ন্যুব্জ দয়ামনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করলেও শীতের কাপড় কেনা তাঁর পক্ষে দুষ্কর। কম্বল পেয়ে রাতের হিম বাতাস থেকে রক্ষা পাবেন বলে জানালেন তিনি। তিনি বললেন, ‘তোমহাক আশীর্বাদ করু। এত দূরত আসিয়া হামার খোঁজ নিলেন, কম্বল দিলেন।’
বাহাদুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘কম্বল বিতরণে প্রায়ই অব্যবস্থাপনা-বিশৃঙ্খলার কথা শুনি। একটা কম্বলের জন্য অসহায়দের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখেছি। কিন্তু প্রথম আলোর কম্বল বিতরণের আয়োজন একেবারেই ব্যতিক্রম। বন্ধুসভার সদস্যরা এলাকায় ঘুরে ঘুরে অসহায় শীতার্তদের চিহ্নিত করে স্লিপ তুলে দিয়েছেন। আজ ১৫ মিনিটের মধ্যে কাজ ফেলে আসা শীতার্তদের হাতে কম্বল তুলে দিয়েছেন। কম্বল পেয়ে তাঁরাও (শীতার্ত) বাড়ি ফিরে কাজে লেগে পড়েছেন।’
শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪ ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।