নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলে তুচ্ছ ঘটনার জেরে মো. আবদুল্লাহ (৫২) নামের এক পল্লিচিকিৎসককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের দিঘলিয়াকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. আবদুল্লাহ দিঘলিয়াকান্দি গ্রামের প্রয়াত মো. আবদুস সামাদের ছেলে। তিনি বাঁশগাড়ীর নতুন বাজার এলাকায় ৩০ বছর ধরে স্থানীয় ব্যক্তিদের চিকিৎসা করতেন।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে বাড়ির পাশের খেলার মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলা দেখতে যান আবদুল্লাহর ছোট ছেলে সজীব। তুচ্ছ বিষয়ে এলাকার আলী হোসেনের ছেলে আনোয়ারের সঙ্গে সজীবের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আনোয়ার ও তাঁর দলবল সজীবকে মারধর করে। বাড়িতে ফিরে সজীব ঘটনা জানালে বাবা ও তিন ভাই মিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে ‘কেন মারধর করা হয়েছে’ জানতে চান। এ সময় আনোয়ারসহ অন্তত ১৫ জন উপর্যুপরি কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে ওই চারজনকে আহত করেন। পরিবারটির কয়েকজন সদস্য ও স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. আবদুল্লাহকে মৃত ঘোষণা করেন।
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খান নুরউদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর বলেন, পল্লিচিকিৎসক আবদুল্লাহকে বাঁশগাড়ী থেকে গতকাল রাতে মৃত অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। এরপর আজ শনিবার সকালে তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে কথা হয় নিহত মো. আবদুল্লাহর ছেলে রাসেল মিয়ার সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘তুচ্ছ ঘটনায় আমাদের মারধর করা হলেও এর পেছনে অন্য কারণ আছে। এলাকায় নির্দিষ্ট কোনো গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত না থাকায় আমাদের কাছে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছিল স্থানীয় ইউপি সদস্য এরশাদ মেম্বার গ্রুপ। সম্প্রতি আমাদের কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল তারা। ওই চাঁদা না দেওয়ায় এরশাদ মেম্বার গ্রুপের সক্রিয় সদস্য আনোয়ার দলবল নিয়ে এই মারধর ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটান। এর আগেও হত্যাসহ এরশাদ মেম্বারের বিরুদ্ধে অন্তত ১৫টি মামলা আছে।’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আজ দুপুরে রায়পুরার চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের (ইউপি) সদস্য এরশাদের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। এ সময় তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত আনোয়ারের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকেই বাড়ি তালাবদ্ধ রেখে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এলাকা ছেড়েছেন তিনি।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জব্বার বলেন, নিহত পল্লিচিকিৎসকের শরীরে কিল-ঘুষির আঘাতের চিহ্ন আছে। তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ইউপি সদস্যসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটকের চেষ্টা চলছে। লিখিত অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে।