বিএনপির ডাকা দ্বিতীয় দফার ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের প্রথম দিন দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় বগুড়ায় নতুন করে পুলিশ পৃথক দুটি মামলা করেছে। মামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৫৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তবে অজ্ঞাতপরিচয় আসামির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। আজ সোমবার বগুড়া সদর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে এ দুই মামলা করেছে।
এ নিয়ে গত ছয় দিনে দুই দফা অবরোধে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা হলো। আসামি করা হয়েছে ৩৮২ জনকে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও অনেককে।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইয়ান ওলিউল্লাহ বলেন, গতকাল রোববার শহরতলির বেলাইল ও ঝোপগাড়ি এলাকায় অবরোধে সমর্থনকারীরা পুলিশের ওপর ককটেল হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ৫৫ জনকে আসামি করে আজ মামলা হয়েছে। তবে এ দুটি মামলায় নতুন করে কেউ গ্রেপ্তার হননি।
মামলার এজাহার, পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা যায়, রাতে ছেড়ে আসা বেশ কিছু যানবাহন গতকাল সকালে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে। শহরতলির বেলাইল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল দল আটকা পড়া যানবাহন পারাপার করে দেওয়ার চেষ্টা করলে পেছনের দিকে থাকা কয়েকটি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়। পরে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. মাহবুব আলমসহ কমপক্ষে পাঁচ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন মিয়া বাদী হয়ে ২৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক জাকির আল আহসান।
অন্যদিকে গতকাল সকাল সোয়া ১০টার দিকে শহরের ঝোপগাড়ি এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কেও অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আরেকটি মামলা করেছেন সদর থানার এসআই জাকির আল আহসান। মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ২৭ নেতা-কর্মীকে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক মোশারফ হোসেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, অবরোধে মহাসড়কে আটকে পড়া বেশ কিছু যানবাহন পুলিশের পাহারায় রংপুরের দিক থেকে ঢাকা অভিমুখে যাচ্ছিল। এ সময় ঝোপগাড়ি এলাকায় অবরোধকারীরা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। পুলিশ তাঁদের নিবৃত্ত করতে গেলে অবরোধকারীরা লাঠিসোঁটা হাতে পুলিশের ওপর হামলা করেন এবং সরকারি কাজে বাধা দেন। এ সময় অবরোধকারীদের ছোড়া ককটেল হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি করছে ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। এতে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. মাহবুব আলমসহ অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ উল্টো গত চার দিনে বিএনপির ডাকা অবরোধে প্রায় ৪০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা করেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই শতাধিক নেতা–কর্মীকে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও অনেককে।