ফরিদপুরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জাহানারা বেগম (৩৯) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এটি ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুরে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫২ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী। ফরিদপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া জাহানারা বেগম রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের মো. ইউনুসের স্ত্রী। তিনি ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহিলা সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বুধবার বিকেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। আজ ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ফরিদপুরে জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৫০২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে আজ ভোরে জাহানারা নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। এটিই ফরিদপুরের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। তিনি বলেন, ফরিদপুরে দ্রুত ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। এ জন্য মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু সচেতনতায় মাইকিং, স্কুল-কলেজ, হাটবাজারে লিফলেট বিতরণসহ প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫২ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৫, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪, নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ২, বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২, ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২, আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ এবং চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুরে ৭২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর আগে ১১ জুলাই ২০ জন, ১২ জুলাই ২৪, ১৩ জুলাই ৩৬, ১৪ জুলাই ২১, ১৫ জুলাই ১৮, ১৬ জুলাই ২৫, ১৭ জুলাই ৪০, ১৮ জুলাই ৩৪ ও ১৯ জুলাই ৩৪ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। অর্থাৎ গত ১১ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯৬ জন। যা মোট রোগীর প্রায় ৭৮ শতাংশ। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ফরিদপুরে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫০৯ জন। এর মধ্যে ৩৪৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬৩ জন।
আজ সরেজমিনে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগের দোতলায় ৩৭টি শয্যা নিয়ে ডেঙ্গু ওয়ার্ড। আগে এটি করোনা ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তবে শয্যার তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রাজবাড়ীর কালুখালী থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন টুটুল শেখ (২৭)। তাঁর শ্বশুর লোকমান হোসেন বলেন, তাঁর জামাতা জ্বর নিয়ে কালুখালী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ায় সেখান থেকে এই হাসপাতালে পাঠায়। এখন তিনি ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁকে আরও দুই থেকে তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
ডেঙ্গু ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স শম্পা মণ্ডল বলেন, ওয়ার্ডে মোট শয্যা ৩৭, রোগী ভর্তি আছেন ৪১ জন। তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় তলায় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড, তৃতীয় তলায় পুরুষ পেয়িং ওয়ার্ড, মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড ২ ও ৩ এবং পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এনামুল হক বলেন, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। রোগী বাড়ায় তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এরপরও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অন্যান্য ওয়ার্ডে সাধারণ রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।