‘বাকির হাট’ থেকে ৬৫০ টাকার পণ্য কিনলেন দরিদ্ররা

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ‘বাকির হাট’ থেকে টাকা ছাড়াই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন লোকজন। খুলনা প্রেসক্লাবে বুধবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

এখন কোনো দোকানদার বাকিতে পণ্য বিক্রি করতে চান না। অনেক দোকানের সামনে তো লেখাই থাকে ‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দেবেন না’। তবে বুধবার সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এক ব্যতিক্রমী হাট বসেছিল। এর নামই ছিল ‘বাকির হাট’। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন খুলনা নগরের অসহায় ও গরিব মানুষের জন্য এ হাটের আয়োজন করে। হাট থেকে ব্যাগ ভরে পণ্য কিনেছেন অনেকে।

চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, লবণ, শাকসবজি, মাছ, মুরগি, বাচ্চাদের শিক্ষা উপকরণ, কাপড়সহ প্রায় ২৫টি পণ্য নিয়ে বসেছিল ওই হাট। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সেখান থেকে পণ্য কিনেছেন ২৫০ জনের বেশি মানুষ। একেকজন সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকার পণ্য নিতে পেরেছেন।

বেলা ১১টায় হাটের উদ্বোধন করেন খুলনা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ। এ সময় বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজকেরা জানান, শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্য ক্রেতাদের নাম বাকির খাতায় লেখা হয়। তবে এ টাকা কখনো তাঁদের পরিশোধ করতে হবে না। তবে শর্ত দেওয়া হয়, যদি কখনো পরিশোধ করার মতো সামর্থ্য অর্জন করেন, এসব ক্রেতা তখন যেন একই ধরনের পণ্য আরেক হতদরিদ্র পরিবারকে কিনে দেন। বাজার শেষে প্রতিটি ক্রেতার নাম ও বাকির পরিমাণ লিখে একটি আঙুলের ছাপ নিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

তাঁরা আরও জানান, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিটি সেবামূলক কাজের পেছনে একটি বার্তা থাকে। বাকির হাটের মাধ্যমে তাঁরা সমাজের মানুষ যেন আরেকজন মানুষকে সাহায্য করেন, এমন একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাহায্য চাওয়া কোনো লজ্জার বিষয় নয়, বরং সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য করা মানবিক একটি দায়িত্ব—এ বিষয়টিও বোঝানো হয়।

দুপুর ১২টার দিকে ওই হাটে গিয়ে দেখা যায়, টেবিলে টেবিলে সাজানো হরেক রকমের পণ্য। চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই রয়েছে সেখানে। ক্রেতারা আসছেন আর ঘুরেফিরে নিজের পছন্দমতো পণ্য কিনছেন। তবে ৬৫০ টাকার বেশি যেন কেউ পণ্য নিতে না পরেন, সে জন্য স্বেচ্ছাসেবকেরা নজরদারি করছেন।

ক্রেতাদের সবাই বয়োবৃদ্ধ। নারীর সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ ব্যক্তি হাটে ঢুকেই ভড়কে যাচ্ছেন। কী নেবেন, আর কী নেবেন না, তা নিয়ে ধন্ধে পড়ে যাচ্ছেন। নগরের বয়রা এলাকার সিরাজুল ইসলাম এসেছিলেন ওই হাট থেকে বাকিতে পণ্য কিনতে। তিনি বলেন, ‘পাড়ার মুদিদোকানিরা এখন বাকি দিতে চান না। দিলেও সেটা সময়মতো পরিশোধ করতে পারি না। আজ বাকিতে এত কিছু পেয়ে কয়েক দিনের খাওয়ার দুশ্চিন্তা কমল।’

গল্লামারী এলাকার জেলে বিজন সরকার বলেন, বিভিন্ন এলাকায় মাছ ধরার দরকার হলে লোক ডেকে নিয়ে যায়। এক দিন কাজ না থাকলে আয় বন্ধ, ঘরের বাজারও বন্ধ থাকে। তখন মুদিদোকান থেকে জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে লজ্জায় পড়তে হয়। বাকির হাট থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে যা যা প্রয়োজন সবই কিনেছেন বলে জানান তিনি।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. হাসিব মিয়া বলেন, কারা ওই হাট থেকে পণ্য কিনবেন, তা নির্ধারণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে জরিপ করা হয়েছে। বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকেরা ওই কাজ করেছেন। ওই জরিপের ভিত্তিতে পরিবার চিহ্নিত করা হয়েছে।