মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে জায়গাটির অবস্থান; লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে। সেখানকার সব স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর থেকে রক্ষা পায়নি কবরও। চারদিকে ইট, পলেস্তারা ও কংক্রিটের পিলার পড়ে আছে।
এটি হজরত শাহ সুফি মেহেরুল্লাহ শাহ ওরফে শাহ ভালার দরবার শরিফ (মাজার)। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কোষাঘাটায় এর অবস্থান। প্রায় ৩০০ বছর আগে শাহ ভালার স্মরণে তাঁর ভক্ত-আশেকানরা এই দরবার শরিফ গড়ে তোলেন। শিরনি দিতে ও মানত শোধ করতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এখানে আসতেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৬ ও ৭ আগস্ট রাতে একদল লোক ওই দরবার শরিফে হামলা করে; সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়। খাদেম ও ভক্তরা অভিযোগ করেছেন, দরবার শরিফে না যাওয়ার জন্য হুমকি–ধমকি দেওয়া হচ্ছে।
লেখক গবেষক রাজিব আহমেদ জানান, ইসলাম ধর্মের অন্যতম প্রচারক হজরত খানজাহান আলীর (র.) উত্তরসূরি হিসেবে হজরত শাহ সুফি মেহেরুল্লাহ শাহ ওরফে শাহ ভালা মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে কোষাঘাটায় আস্তানা গড়েছিলেন। সেখান থেকেই ধ্যান এবং এই জনপদে ইসলাম প্রচার করেন। তাঁর স্মরণে ভক্ত-আশেকানরা ১৭১৪ সালে এই দরবার শরিফ গড়ে তোলেন।
ইসলাম ধর্মের অন্যতম প্রচারক হজরত খানজাহান আলীর (র.) উত্তরসূরি হিসেবে হজরত শাহ সুফি মেহেরুল্লাহ শাহ ওরফে শাহ ভালা মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে কোষাঘাটায় আস্তানা গড়েছিলেন। সেখান থেকেই ধ্যান এবং এই জনপদে ইসলাম প্রচার করেন। তাঁর স্মরণে ভক্ত-আশেকানরা ১৭১৪ সালে এই দরবার শরিফ গড়ে তোলেন।
গত রোববার দুপুরে গিয়ে দরবার শরিফের প্রধান ফটকের কংক্রিটের পিলার পড়ে থাকতে দেখা যায়। ভেতরে কংক্রিটের খুঁটি, ইট ও টাইলসের টুকরা চোখে পড়ে। দরবারের খাদেম, ভক্ত-আশেকানদের থাকার ঘর, রান্নাঘর এবং রেজাউল চিশতীসহ দুজন সাধকের কবর ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। হামলাকারীরা এসব স্থাপনার টিনের চাল ও লোহার অ্যাঙ্গেল নিয়ে গেছে।
কোষাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা রজব আলী জানান, প্রতিবছর চৈত্র মাসের ২৪ তারিখে বার্ষিক ওরস এবং প্রতি বৃহস্পতিবার দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এসে মানত শোধ করতেন। মানত হিসেবে কেউ ছাগল, আবার কেউ মুরগি জবাই করে রান্নার পর ভাত-মাংস শিরনি দিতেন।
কোষাঘাটা গ্রামের মসলেম আলী (৬০) ১৫ বছর ধরে দরবারের খাদেমের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট রাতে এশার নামাজের পর চরমোনাই পীরের অনুসারী সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে গ্রামের কিছু লোক দরবারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরদিন ৭ আগস্ট রাতে মাজার, বিশ্রামের ঘর, রান্নাঘর ও গেট ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেয় তারা।
মসলেম আলী অভিযোগ করেন, ‘যারা দরবার ভাইঙেচে, তারাই উল্টো আমাগের বাড়িঘর ভাইঙে দিয়াসহ মামলার হুমকি দেচ্চে। পাহারা কচ্চে, যাতে কেউ সেকেনে যাতি না পারে। কেউ ছিন্নি কত্তি আসলি ফেরত পাটাইনো হচ্চে। ঝামালার কতা ভাইবে পুলিশির জানায়নি।’
নিরাপত্তার অভাবে মাজারের খাদেম ও ভক্তরা নীরব আছেন। ভয়ে-আতঙ্কে অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। হামলাকারীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে প্রশাসনকে লিখিতভাবে এ বিষয়ে জানানো হবেমহিউদ্দিন ফকির, চুয়াডাঙ্গা জেলা বাউল কল্যাণ সংস্থার সভাপতি
সিরাজুল ইসলাম দামুড়হুদা উপজেলা মুজাহিদ কমিটির সভাপতি। ওই অভিযোগ সম্পর্কে জানতে গত রোববার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাবেক সেক্রেটারি জোনারুল ইসলাম দাবি করেন, সিরাজুল ইসলাম বয়স্ক লোক। তাঁর বয়স ৭০ বছর। তাঁর বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বাউল কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মহিউদ্দিন ফকির দাবি করেন, ‘নিরাপত্তার অভাবে মাজারের খাদেম ও ভক্তরা নীরব আছেন। ভয়ে-আতঙ্কে অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। হামলাকারীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা সবাই মাজারবিদ্বেষী এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে প্রশাসনকে লিখিতভাবে এ বিষয়ে জানানো হবে।’
সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা বলেন, দরবার শরিফ বা মাজার ভাঙচুরের বিষয়ে কেউ তাঁকে জানাননি। এ বিষয়ে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।