প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট-সাজেক ও মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কের এক পাশে মাটি সরিয়ে জরুরি যানবাহন যাতায়াতের ব্যবস্থা করা সম্ভব হলেও বাঘাইহাট-সাজেক সড়কটি এখনো পুরোপুরি বন্ধ। অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ভারী বৃষ্টিতে দুই সড়কের যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে এবং পাহাড়ি ঢলে পৌর শহরের বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি কমলে দ্রুত পানি সরে যাবে। মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কে ধসে পড়া একাংশের মাটি সরিয়ে এখন জরুরি যানবাহন চলাচল করছে। তবে পানি সরে না গেলে বাঘাইহাট-সাজেক সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে না বলে তিনি জানান।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার রাতে ভারী বৃষ্টিতে কাচালং নদের পানি বৃদ্ধি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইহাট-সাজেক সড়কের তিনটি স্থানে নিচু এলাকা তলিয়ে যায়। সড়কের বাঘাইহাট বাজার এলাকায় দুটি জায়গায় এবং মাচালং বাজার এলাকায় একটি জায়গায় সড়ক বুক ও কোমরসমান পানিতে তলিয়ে যায়। আজ সকাল আটটার পর সড়কের দুই দিক থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েন। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাজেকের রিসোর্ট-কটেজের বুকিং বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে আজ সকাল ছয়টার দিকে বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির উদ্দেশে বেশ কিছু যানবাহন রওনা দিলে চার কিলো এলাকায় পৌঁছালে দেখতে পায় পাহাড় ধসে সড়কের ওপর মাটি পড়ে পুরো সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া আট কিলো, নয় কিলো ও দুই টিলা এলাকায় অন্তত ৬ থেকে ৭টি স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এতে সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মীরা ধসে পড়া মাটি সরানোর কাজ করেন। টানা ৭ ঘণ্টা মাটি সরানোর কাজ করার পর সড়কের এক পাশ দিয়ে জরুরি যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। কাল বুধবার বাকি মাটি সরানোর কাজ চলবে বলে জানা গেছে।
বাঘাইছড়ি সদরের বাস-জিপ ও পিকআপ কাউন্টারের ব্যবস্থাপক প্রদীপ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলের দিকে সড়কের ধসে পড়া কিছু মাটি সরানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ দেখে তাঁরা কোনো গাড়ি ছাড়তে দেননি। সড়কজুড়ে কাদামাটি। এখন যাতায়াত করলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যেসব যানবাহন জরুরি, শুধু সেগুলো যাতায়াত করছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কে বেশ কয়েকটি স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা সারা দিন কাজ করে যান চলাচলের উপযোগী করেছেন। তবে সড়ক থেকে মাটি সরানোর কাজ এখনো অনেক বাকি। কাল আবার কাজ চলবে বলে তিনি জানান। তবে রাতে বৃষ্টি হলে আবার পাহাড়ধস হতে পারে।
এ ছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এরই মধ্যে পাঁচ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র মো. জমির হোসেন।