পাঁচ দিন পর পানি নেমে গেলেও সারা দেশের সঙ্গে এখনো বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। বান্দরবান-কেরানীহাট-চট্টগ্রাম সড়কের ডুবে থাকা অংশের পানি নেমে গেলে কাল বৃহস্পতিবার যান চলাচল চালু হতে পারে বলে পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
এদিকে টানা তিন দিন ধরে পুরো জেলায় বিদ্যুৎ নেই। কবে নাগাদ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে, সেটিও জানাতে পারেননি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা।
আজ বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পানিতে ডুবে যাওয়া উজানীপাড়া, বাসস্টেশন এলাকা, ওয়াপদা সেতু, ফরেস্টার কার্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পানি নেমে গেছে। তবে কাদাপানিতে রাস্তাঘাট পরিপূর্ণ। শুধু বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এলাকায় সড়কের কিছু অংশ পানিতে ডুবে আছে। লামা উপজেলা শহরেও ডুবে যাওয়া অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে।
পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, সারা দেশের সঙ্গে বান্দরবানে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক বান্দরবান-কেরানীহাট-চট্টগ্রাম সড়কের সাতকানিয়া অংশে বেশ কয়েকটি এলাকা এখনো ডুবে আছে। পানি বেশি হওয়ায় কোনো যানবাহন সরাসরি চলাচল করতে পারছে না। পানি কমে গেলে ঢাকাগামী দুই-একটি বাস ছাড়ার কথা আছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সব ধরনের যান চালু করা হবে। তবে উপজেলার সড়কের বিভিন্ন অংশে পাহাড় ধসে পড়েছে। কোথাও কোথাও সড়কও ভেঙে গেছে। এ জন্য সংস্কার, মাটি সরিয়ে যান চালু করতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
বান্দরবান সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ইস্তিয়াকুর রহমান বলেন, হাসপাতালে রোগী কম থাকায় তেমন সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের চট্টগ্রাম বা অন্য কোথাও পাঠানো যাচ্ছে না। সংকটে পড়া এমন দুই-তিনজন রোগী আছেন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের সরবরাহকেন্দ্রটি কাদাপানিতে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। সেখানে কোনো প্রকৌশলীকে পাওয়া না গেলেও কর্মচারীরা কাদা সরানোর কাজ করছিলেন। নাসীর উদ্দিন নামের এক কর্মচারী বলেন, সরবরাহ উপকেন্দ্রটি প্রায় দুই দিন পানিতে ডুবেছিল। এ জন্য এটি চালু করতে বিশেষজ্ঞদের লাগবে। কাল বা পরশু বিশেষজ্ঞরা এলে তারপর চালু করা সম্ভব হতে পারে। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই চালু করলে সমস্যা হতে পারে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় জেলা শহরের পানি সরবরাহেও সমস্যা দেখা গেছে। রান্নার পানি ও পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শহরে বোতলজাত পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকারে মোমবাতির সংকটের কথাও বলছেন কেউ কেউ।
বান্দরবান সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া হালিমা বেগম ও শিরিন আক্তার বলেন, পৌরসভা থেকে দিনে এক পরিবারকে এক কলস পানি দেওয়া হয়। ওই পানি পান করবেন, নাকি অন্য কাজে লাগাবেন? রান্না করা খিচুড়ি দেয় দিনে দুইবার। সেগুলো যথেষ্ট না হওয়ায় ভাত রান্না করে খেতে হয়। কিন্তু পানি নেই। বাজারে মোমবাতিও পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্যমতে, জেলায় ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১১ হাজার দুর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পাহাড়ধস ও বন্যার পানিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ আছেন দুজন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রান্না করা খাবার বিতরণের জন্য ৮৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে উপজেলাভিত্তিক কতজন আশ্রয় নিয়েছেন এবং কোন উপজেলায় কত টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেটার বিস্তারিত তথ্য নিয়ন্ত্রণকক্ষে নেই বলে জানান দায়িত্বরত তাসলিমা সিদ্দিকা। চারজনের মৃত্যু ও দুজন নিখোঁজের তথ্য দেওয়া হলেও তাঁদের নাম-পরিচয় জানায়নি নিয়ন্ত্রণকক্ষ।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দি বলেন, শহরের কালাঘাটায় পাহাড়ধসে সোমবার দুজন মারা গেছেন। তাঁরা হলেন সন্ধ্যা রানী শীল (৫২) ও বুলু শীল (২২)। নাইক্ষ্যংছড়িতে ফংসা মারমা নামের একজন পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন। আরেকজনের নাম পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, বন্যার পানি নেমে গেছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আরও ১০০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।