এখনো কোনো কোনো দুর্নীতিবাজ প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে আছে: কাদের মির্জা

ফেসবুক লাইভে আবদুল কাদের মির্জা
ছবি: সংগৃহীত

কোনো কোনো দুর্নীতিবাজ এখনো প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে আছে বলে মন্তব্য করেছেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা বলেছেন, ‘আমরা চাই জাহাঙ্গীরের মতো দুর্নীতিবাজের অবসান হোক। এখনো কোনো কোনো দুর্নীতিবাজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে আছে। আমরা চাই এসব দুর্নীতিবাজেরা যেন বিতাড়িত হয়। ত্যাগী ও সৎ নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন হয়।’

গতকাল সোমবার রাত পৌনে ৯টায় নিজের ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া লাইভ বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ১৮ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের লাইভে কাদের মির্জা তাঁর বড় ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী, আপনার কোম্পানীগঞ্জে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় দুর্নীতি ও মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে।’

লাইভ বক্তব্যে কাদের মির্জা অভিযোগ করেন, জেলার সব ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করছে একটি সিন্ডিকেট। ওপেন টেন্ডার হয় ঠিকই, কিন্তু সুকৌশলে শর্ত দিয়ে রেখেছে কাজ যেন পায়। কিন্তু সিন্ডিকেটের কমিশনের টাকা দিতে হবে জায়গা মতো। কমিশন না দিলে ঠিকাদার কাজ করতে পারবেন না। দলীয়ভাবে দু-তিনটি গ্রুপ থাকলেও টাকা ভাগাভাগির বিষয়ে সব পক্ষ এক থাকে।

নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে কাদের মির্জা বলেন, ‘নোয়াখালীর রাজনীতি নিয়ে আমি ইতিপূর্বে অনেক কথা বলেছি। আমি চেয়েছি দল সঠিকভাবে যেন চলে। আজ নোয়াখালী আওয়ামী লীগের কোনো গুণগত পরিবর্তন হয়নি। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, নোয়াখালী জেলার এমপিদের (সংসদ সদস্য) মধ্যে মাত্র একজন শয়নে-স্বপনে, জাগরণে আওয়ামী লীগ করেন। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শ লালন করেন। তিনি হলেন জননেতা ওবায়দুল কাদের। আর দু-একজন এমপি আছেন, তাঁদেরও দলের প্রতি আন্তরিকতা আছে, মমত্ববোধ আছে। আর সব এমপি আপনা লীগ মানে, নিজের স্বার্থে দল করে।’

কাদের মির্জা আরও বলেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো অনুমোদিত হয়নি। অথচ স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীরা বলছেন, টাকা নিয়ে কমিটিতে নেতা নির্বাচন করে বাণিজ্য শুরু হয়েছে।

নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে মন্তব্য করে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, আজ সারা দেশে নীতিমালা ছাড়া গ্রামে গ্রামে ব্যাঙের ছাতার মতো ক্যাডেট মাদ্রাসা হচ্ছে। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এত উচ্চশিক্ষিত অভিজ্ঞ শিক্ষক ও এত সুযোগ–সুবিধা দেওয়ার পরও উল্লেখযোগ ছাত্র–ছাত্রী নেই। সব ছাত্র–ছাত্রী ক্যাডেট মাদ্রাসায় চলে গেছে। কোম্পানীগঞ্জের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ১২ জন, শিক্ষার্থী আছে ৮ জন।

২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি পৌরসভা নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণাকালে জাতীয় নির্বাচন, ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যের অপরাজনীতি, টেন্ডারবাজি, চাকরি-বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা। একপর্যায়ে তিনি দলের মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নেতা, এমনকি বড় ভাই ওবায়দুল কাদের ও ভাবি ইশরাতুন্নেসা কাদেরের বিরুদ্ধেও নানা বিষোদ্‌গার শুরু করেন।

দলীয় সূত্র জানায়, ভাই-ভাবির বিরুদ্ধে কাদের মির্জার একের পর এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দেয়। যা শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী সংঘর্ষে গড়ায়। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৭২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি হয়েছে দুই পক্ষের সাত থেকে আট হাজার দলীয় নেতা-কর্মী।