ভোলার লালমোহন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তার হোসেন হাওলাদারের (শালিক পাখি প্রতীক) বিরুদ্ধে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তারুজ্জামান (দোয়াত কলম প্রতীক) আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। সেই সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার রাতে গণসংযোগকালে শালিকের লোকজন দোয়াত কলমের লোকজনের ওপর হামলা করে পাঁচজনকে আহত ও চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
লালমোহন পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনী কার্যালয়ে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় আক্তারুজ্জামান (টিটব) সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেছেন। তিনি উপজেলা বিএনপির বিরোধপূর্ণ দুই কমিটির একাংশের সাধারণ সম্পাদক। তিনি চরভূতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
তবে আক্তার হোসেন হাওলাদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এসব সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কিছু যায়–আসে না। তিনি বা তাঁর লোকজন কারও ওপর হামলা করেননি।
আক্তার হোসেন হাওলাদার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি কালমা ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনিও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ, ভোটাররা জানেন যে মানুষ ভোটে গেলেও যা হয়, না গেলেও তা হয়। ভোটের আগে প্রার্থীরা বিজয় নিশ্চিত হওয়ার কারণে মানুষ ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। এখন ভোটকেন্দ্র ভোটারশূন্য। বিষয়টি সরকার উপলব্ধি করে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন প্রতীকবিহীন করেছে। আওয়ামী লীগের সব প্রার্থীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার অনুমোদন দিয়েছে। একটি অবাধ, সুস্থ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার কারণে আমি নির্বাচনে এসেছি।’
আক্তারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই শালিক প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তার হোসেন হাওলাদার ও তাঁর লোকজন আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। আক্তার হোসেন হাওলাদার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচনী আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে নিজেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দাবি করছেন। সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছেন। মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে কালমা ইউনিয়নের ডাওরী বাজারে নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণাকালে সংঘাতমূলক পরিস্থিতি তৈরির উসকানি দিতে থাকেন শালিকের লোকজন।
আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ডাওরী বাজার জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে বের হয়ে কর্মীদের নিয়ে আসার পথে আমার প্রতিপক্ষ মো. আক্তার হোসেন, তাঁর ছোট ভাই ইকবাল হোসেনসহ আরও ৪০-৫০ জন লাঠিসোঁটা, লোহার রড, জিআই পাইপ, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে তাঁদের পথ রোধ করে হামলা চালান। আমার বহরের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে মো. শামীম হোসেন, মো. ছালাউদ্দিন, আবদুল হাই, মো. ইউসুফসহ আরও অনেককে পিটিয়ে আহত করেন। বর্তমানে তাঁরা লালমোহন উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ সময় আমার বহরে থাকা চারটি মোটরসাইকেলে ভাঙচুর করা হয়।’
দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী আক্তারুজ্জামান আরও বলেন, ‘শালিকের লোকজন দোয়াত কলমের লোকজনকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। আমি যদি নির্বাচন থেকে সরে না যাই, তাহলে প্রাণে মেরে ফেলবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন। এসব ঘটনায় আমি লালমোহন থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। বিষয়টি উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার কাছে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানাই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তাঁরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে উপহার দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কারও আচরণবিধি লঙ্ঘনের সুযোগ নেই। দোয়াত কলমের প্রার্থীর অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ পাঠিয়েছেন। তবে ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি। ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।