পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ভৈরব শহরের একাধিক সড়কের পাশে ময়লা–আবর্জনা ফেলছেন।
গত শনিবার দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিট। দুজন স্কুলশিক্ষার্থী নাক–মুখে টিস্যু চেপে কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের জিল্লুর রহমান শহর রক্ষা বাঁধ সড়কের পাশ ঘেঁষে এগিয়ে যাচ্ছিল। একজন অপরজনকে জিজ্ঞেস করে, ময়লা-আবর্জনা ফেলার আর কী কোন জায়গা পাওয়া গেল না?
অন্যজনের উত্তর, পাওয়া গেলে কি দিন দিন স্তূপ না কমে বড় হচ্ছে? দুজনের একজন সৌরভ আহমেদ। স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। বাসা শহরের বাগানবাড়ি এলাকায়।
সৌরভ বলে, বাধ্য হয়েই দিনে একাধিকবার এই সড়ক দিয়ে আসা–যাওয়া করতে হয়। সড়কের এক পাশে দিন দিন ময়লা-আবর্জনা ফেলার পরিমাণ বাড়ছে। বড় হচ্ছে স্তূপ। দুর্গন্ধের তীব্রতাও বাড়ছে। ফলে আসা যাওয়ার সময় নাক চেপে সড়কটি পারাপার হওয়া ছাড়া গতি থাকে না।
জিল্লুর রহমান শহর রক্ষা বাঁধ সড়কটি নির্মাণ হয় ২০১১ সালে। সড়কটি মেঘনা নদীঘেঁষা। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের নামানুসারে নামকরণ করা হয় বাঁধ সড়কটির। ভৈরব ব্রিটিশ আমল থেকেই নৌবন্দর। মূলত নৌবন্দরের মালামাল পরিবহন করতে সড়কটি অধিক ব্যবহার হয়। এ ছাড়া ভৈরব বাজারের মালামাল পরিবহনেও সড়কটির গুরুত্ব রয়েছে। ভৈরব পৌরসভা মর্যাদায় প্রথম শ্রেণির। কিন্তু এই পৌরসভার আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন নেই। ফলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সুবিধা অনুযায়ী শহরের একাধিক সড়কের পাশে আবর্জনা ফেলে দায়মুক্ত হয়ে আসছে। পাঁচ বছর আগ থেকে সড়কটির এক পাশে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলা শুরু হয়। সড়কের অপর পাশে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কিছুটা দূরে আবাসিক এলাকা। ফলে শুরুর দিকে এই নিয়ে ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। আবর্জনা ফেলা বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলন হওয়ার পর কয়েক মাস ফেলা বন্ধ থাকে। কিন্তু এক বছর আগ থেকে ফের শুরু হয়। বর্তমানে শহরের বেশির ভাগ ময়লা–আবর্জনা ফেলার জন্য এই স্থানটি ব্যবহার করা হয়। এতে স্তূপ বড় হচ্ছে এবং দুর্গন্ধের তীব্রতা বাড়ছে।
আমাদের মূল সমস্যা ডাম্পিং স্টেশন নেই। ডাম্পিংয়ের জন্য আলাদা জায়গা ক্রয়ের চেষ্টা চলছে। আশা করছি এক বছরের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।মো. দ্বীন ইসলাম, কাউন্সিলর, ২ নম্বর ওয়ার্ড
গত শনিবার দুপুরে দেখা যায়, আবর্জনা স্তূপের স্থানে স্থানে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সড়কটিতে নীরবতা। যান চলাচল কম। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, দুর্গন্ধ বাড়ায় অধিক প্রয়োজন ছাড়া কেউ আর এখন এই সড়ক ব্যবহার করেন না। বিকল্প সড়ক দিয়ে প্রয়োজন সারেন।
সড়কের পাশে খাজা ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক মো. সাবেরীন। জিজ্ঞেস করতেই রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে সাবেরীন বলেন, বাইর থেকে আসা কোন মানুষ এখানে কয়েক মিনিট থাকতে পারেন না। অথচ এই দুর্গন্ধ হজম করে আমাদের প্রতিদিন অন্তত আট ঘণ্টা অবস্থান করতে হয়।
আরাফাত মেটালস এই সড়কের পাশে প্রতিষ্ঠা পাওয়া একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আরাফাত ভূঁইয়া। তাঁর ভাষ্য, কখনো কখনো দুর্গন্ধে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে হয়। পেট ব্যথা শুরু হয়ে যায়। এই নিয়ে আন্দোলন করেও ময়লা ফেলা বন্ধ করা যায় না। বরং এখন বাড়ছে।
সড়কটির অবস্থান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. দ্বীন ইসলাম। দুর্ভোগের কথা তাঁর অজানা নয়। তিনি জানান, সড়কটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি খুবই বিব্রত। সড়কে বের হলেই এই নিয়ে তাঁকে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল সমস্যা ডাম্পিং স্টেশন নেই। ডাম্পিংয়ের জন্য আলাদা জায়গা ক্রয়ের চেষ্টা চলছে। আশা করছি এক বছরের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
সমস্যার সমাধান করতে না পারার পেছনে মেয়র ইফতেখার হোসেনও ডাম্পিং স্টেশন না থাকাটাকে দায়ী করেন। স্থায়ী সমাধান পেতে নাগরিকদের কিছু দিন অপেক্ষা করার অনুরোধ করেন তিনি।