কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে ‘কুমিল্লা’ নামেই বিভাগের নামকরণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। একই সঙ্গে তাঁরা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে কেউ আর ক্ষমতায় দেখতে চান না। হামলা–মামলা হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি রফিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনার বদলা নেওয়া হবে।
শনিবার বেলা ১১টায় কুমিল্লার টাউন হল মাঠে কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশ হয়। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে ওই গণসমাবেশ হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঞ্চালনা করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জসিম উদ্দিন, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারী ও সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণসমাবেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কুমিল্লাবাসী আপনারা কী নামে বিভাগ চান?’ জবাবে সমাবেশে উপস্থিত তিন জেলার নেতা–কর্মীরা দুই হাত উঁচিয়ে ‘কুমিল্লা’ ধ্বনিতে আওয়াজ করেন।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা ও আশপাশের জেলাগুলো নিয়ে নতুন বিভাগ করতে যাচ্ছে সরকার। রোববার প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় ‘মেঘনা’ নামের এই বিভাগ অনুমোদনের প্রস্তাব আলোচ্যসূচিতে আছে।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও মেঘনা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আগামীকাল রোববার (আজ) প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে নিকারের বৈঠক হবে। আমরা ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লার নামে বিভাগ চাই। এই কুমিল্লা ঐতিহাসিক কুমিল্লা। এই সরকারের প্রধান কুমিল্লার জনগণকে দেখতে পারেন না। সরকারপ্রধান যদি হীনম্মন্যতার পরিচয় দেন, কুমিল্লাবাসী এটা মানবে না। মানতে পারে না। কুমিল্লার সবাই তা প্রত্যাখ্যান করবে।’
কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের বিএনপির টানা চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহমান মুন্সী বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে মেঘনা নাম পাল্টে কুমিল্লা নামে বিভাগ হবে।’
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘কুমিল্লা নামেই বিভাগ চাই। বিএনপির আমলেই কুমিল্লায় মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। সদর দক্ষিণ পৌরসভা হওয়ার কারণেই কুমিল্লা পৌরসভা মিলিয়ে পরে সিটি করপোরেশন হয়।’
বর্তমানে দেশে আটটি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ। এর বাইরে বৃহত্তর ফরিদপুরের কয়েকটি জেলা নিয়ে ‘পদ্মা’ বিভাগ এবং কুমিল্লা ও আশপাশের জেলাগুলো নিয়ে ‘মেঘনা’ বিভাগ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামীকাল রোববার প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস–সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় নতুন এই দুই বিভাগ অনুমোদনের প্রস্তাব উঠতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসংস্থান সম্পাদক জাকারিয়া তাহের বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই। ব্যবসা–বাণিজ্যে মন্দাভাব। মানুষ অত্যাচারী সরকারকে আর চায় না। পতনের জন্য মাঠে নেমে এসেছেন তাঁরা।
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, হত্যা, খুন, মামলা, হামলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে।
সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, বাংলাদেশে ইভিএমে ভোট হবে না, ব্যালটে ভোট হবে।
৯ বছর আগে গুমের শিকার কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবিরকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান বিএনপির নেতারা।
লাকসাম উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম বলেন, ‘৯ বছর আগে শেখ হাসিনার সরকার লাকসামের বিএনপির দুই নেতা সাইফুল ও হুমায়ুনকে গুম করেছে। লাকসামে প্রতিনিয়ত বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হচ্ছে। হামলা–মামলা হচ্ছে। নির্যাতন হচ্ছে। এ ঘটনার বদলা নেওয়া হবে।’
হুমায়ুনের ছেলে রাফসান ইসলাম ও পারভেজের ছেলে শাহরিয়ার কবির বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। পুলিশের গুলিতে নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি রফিকুল ইসলামের বাবা রহমত উল্লাহ ছেলে হত্যার বিচার চেয়েছেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে খন্দকার মারুফ হোসেন, চাঁদপুরের বিএনপি নেতা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রবাসীকল্যাণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও দাউদকান্দির বাসিন্দা শিক্ষকনেতা মো. সেলিম ভূঁইয়া, বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ প্রমুখ।