রাজশাহীর পুঠিয়ায় ‘তুলে আনার’ হুমকির এক দিন পরই একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে সন্ত্রাসী কায়দায় সংসদ সদস্য মনসুর রহমানের বাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তিন ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখার পর পুলিশ দিয়ে অধ্যক্ষকে মাদ্রাসায় পাঠানো হয়। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পুঠিয়ার বিড়ালদহ সৈয়দ করম আলী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান।
সৈয়দ করম আলী ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ওই কমিটিতে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার অনুসারীরা স্থান পাওয়ায় ‘ক্ষুব্ধ হয়ে’ বর্তমান সংসদ সদস্য মনসুর রহমান এই কাণ্ড করেছেন বলে অভিযোগ।
ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে আছেন অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান। তিনি আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ভয়ে ভয়ে মাদ্রাসায় এসে বসেছেন। সংসদ সদস্যের লোকজন এখনো বিড়ালদহ বাজারের দিকে মহড়া দিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা-কর্মী অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানকে মাদ্রাসা থেকে তুলে নিয়ে যান। এ সময় তাঁর মুক্তির দাবিতে উপজেলার বিড়ালদহে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক প্রায় ২০ মিনিটি অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা। ঘটনার তিন ঘণ্টা পর পরে পুলিশ দিয়ে অধ্যক্ষকে মাদ্রাসায় পাঠানো হয়।
এর আগের দিন ফোন করে সংসদ সদস্য মনসুর রহমান তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ অধ্যক্ষের। ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। সেখানে সংসদ সদস্যের নাম-পরিচয় উল্লেখ করে অধ্যক্ষের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি কাল রাত ৯টায় সময় আমার বাসায় দেখা করবেন। আসবেন তো, না নিয়ে আসতে হবে?’ তখন অধ্যক্ষ জানতে চান, ‘হ্যাঁ, কী দরকার আমার সঙ্গে আবার?’ তখন অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আপনি প্রিন্সিপাল মাদ্রাসার, আমি এলাকার এমপি। আপনাকে ডাকতেছি, আপনি আসবেন। যদি না আসেন, ঘাড় পাকিয়ে আপনাকে তুলে নিয়ে আসব।’ অধ্যক্ষ তখন বলেন, ‘তাই?’ অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘জি, শুইনা রাখেন।’
অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নতুন কমিটি গঠন করেন। এ নিয়ে সংসদ সদস্য মনসুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে ১৪ অক্টোবর রাত ৯টায় ফোন করে তখনই বাসায় ডাকেন। তিনি পাবনায় গ্রামের বাড়িতে আছেন জানালে সংসদ সদস্য পরদিন আসতে বলেন। না হলে ‘ঘাড় পাকড়ে’ তুলে আনার হুমকি দেন।
অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, এর এক দিন পর গতকাল সকাল ৯টায় সংসদ সদস্যের সন্ত্রাসী বাহিনী শফিকুল ইসলাম ওরফে ডাবলু, মুহিন, তুষারসহ পাঁচজন তাঁকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তোলেন। এ সময় তাঁরা কিলঘুষি দিতে থাকেন। তাঁরা জোর করে তুলে সংসদ সদস্যের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে কমিটি নিয়ে সংসদ সদস্য জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। পরে অবশ্য তুলে আনার জন্য ভুল স্বীকার করেছেন। মিষ্টি খাইয়েছেন। ছবিও তুলেছেন। মুহিনকে দিয়ে ক্ষমা চাইয়েছেন।
জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মনসুর রহমান বলেন, ‘অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আমাকে না জানিয়ে গোপনে সাবেক এমপির (আবদুল ওয়াদুদ) লোককে সভাপতি করেছে। এ জন্য তাকে ফোন করেছিলাম। পরে কিছু লোক তাকে তুলে এনেছিল। অধ্যক্ষ এসেই বলল, খুব খিদা লেগেছে, খেতে দেন। আমি তাকে মিষ্টি খাইয়েছি। পরে তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পুলিশ ডেকে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’ অধ্যক্ষকে তুলে আনার হুমকির বিষয়ে মনসুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের হুমকি আমি দিইনি। এসব দারার (আবদুল ওয়াদুদ) কারসাজি। দারা কেমন লোক, তা তো জানেন?’
এ ব্যাপারে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। পরে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা অধ্যক্ষের কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এটি যাচাই–বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনো মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি।