আবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়, গত বছরের চেয়ে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে

চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপদাহে কৃষি কাজ করতে গিয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা কৃষকের। সম্প্রতি দামুড়হুদা উপজেলার পুড়াপাড়া গ্রামে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় আবারও প্রচণ্ড দাবদাহ বইতে শুরু করেছে। সোমবার খুলনার এ জেলায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের এপ্রিল-মে মাসের তুলনায় এ বছর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সর্বশেষ সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় জেলায় আবারও সর্বোচ্চ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে ১৩ এপ্রিল জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

জেলার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, রোববারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। এদিন রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে ১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে; অর্থাৎ মাঝারি থেকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে তাপমাত্রা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মৃদু তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা যদি ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে, তবে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে তা হয় প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ। ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে তা হয় চরম তাপপ্রবাহ।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৩৪ শতাংশ। তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে বিপাকে পড়েছেন জেলার কৃষিশ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষ। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠ থেকে ধান সংগ্রহ ও মাড়াই-ঝাড়াইয়ের কাজ চলছে। সদর উপজেলার দিগড়ী গ্রামের কৃষক আসকার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুদিন ধইরে য্যারাম গরম পড়চে, তাতে মাটে টিকে থাকাই মুশকিল। শরীলডা মনে হচ্চে পুড়ে যাচ্চে।’

চলতি বছরের ১৯ ও ২০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তখন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এটি জেলায় ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

এরপর ২১ এপ্রিল থেকে জেলায় তাপমাত্রা কমতে থাকে। কমতে কমতে ১ মে তা ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে নেমে আসে। ১০ দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমে যায় ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জনজীবনেও নেমে আসে স্বস্তি।

এ স্বস্তি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২ মে একলাফে ২ দশমিক ৫ ডিগ্রি বেড়ে গিয়ে তাপমাত্রা হয় ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর বাড়তে বাড়তে সোমবার তা দাঁড়ায় ৪১ ডিগ্রিতে; অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত এপ্রিল ও মে মাসে তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি থাকে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর গোটা এপ্রিল ও মে মাসে গড়ে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে।

জেলার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছিল। ওই বছর এপ্রিল মাসের গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এবার এপ্রিল মাসের গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অন্যদিকে গত বছরের ১ থেকে ৮ মে পর্যন্ত আট দিন তাপমাত্রা ২৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছিল। ওই আট দিনের গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছরের মে মাসের প্রথম আট দিন তাপমাত্রা ওঠানামা করেছে ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ মাসের আট দিনের গড় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।