বিদ্যালয়ের মাঠে বসেছে হাট। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি খেলাধুলাও বন্ধ থাকে। সম্প্রতি বগুড়ার কাহালু উপজেলার দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বিদ্যালয়ের মাঠে বসেছে হাট। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি খেলাধুলাও বন্ধ থাকে। সম্প্রতি বগুড়ার কাহালু উপজেলার দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

কাহালুতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মাঠে বসে হাট

বগুড়ার কাহালু উপজেলার দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বসছে ধান ও সবজির হাট। দুর্গাপুর হাটের স্থান–সংকটের কারণে বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসাচ্ছেন ইজারাদার।

হাটের ইজারাদার হলেন দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন। সপ্তাহে শুক্র ও মঙ্গলবার ওই হাট বসে। পাঠদান চলাকালীন মাঠে হাট বসানোর কারণে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মনোযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বর্জ্যে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক পরিবেশ।

দুর্গাপুর বাজারের কাছেই দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। গত ৩০ জানুয়ারি সকালে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের মাঠে ধানের হাট বসেছে। এলাকার কৃষকেরা ধান বস্তায় ভরে ভ্যানগাড়ি ও ভটভটিতে করে বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে এসেছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরগরম হাট। হইচইয়ের মধ্যে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, শিশু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত করে বিদ্যালয় মাঠে হাট বসানোর বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু ইজারাদার আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পাননি।

একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার মাঠে হাট বসে। এ দিন শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো পড়ানো যায় না। মাঠে হাট বসার কারণে হইচই হয়। গরমের সময় ধুলাবালুতে শ্রেণিকক্ষে টেকা দায় হয়ে পড়ে। হাট চলাকালে বিদ্যালয়ে পাঠদানের পরিবেশ নেই। ইজারাদার আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় হওয়ায় মাঠে হাট বসানোর বিষয়ে কেউ বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই।

শিক্ষার্থীরা জানায়, সকাল থেকেই মাঠে ধানের হাট বসে। দুপুর থেকে বসে সবজির হাট। ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যাপারীরা মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ের শৌচাগারও ব্যবহার করেন। বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে মাঠ ছেড়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে আশ্রয় নেন।

৫৩ শতক জমির ওপর ১৯৪০ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৯০ জন। শিশু শিক্ষার্থীরা জানায়, মাঠে হাট বসার কারণে শ্রেণিকক্ষে টেকা দায় হয়ে পড়ে। যেদিন হাট বসে, সেদিন মাঠে খেলাধুলা করা যায় না। হাটের পরদিন মাঠে অনেক নোংরা, আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। পচা সবজির দুর্গন্ধ বের হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, যুগ যুগ ধরে বিদ্যালয় মাঠে হাট বসিয়ে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন ইজারাদারেরা। এ বিষয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে মৌখিক অভিযোগ জানালেও প্রতিকার মেলেনি।

জানতে চাইলে হাটের ইজারাদার ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, দুর্গাপুর হাটের জায়গা প্রায় এক একর। এবার তিনি ৪০ লাখ টাকায় হাট ইজারা নিয়েছেন। হাটের কিছু জায়গায় শেড ও পাকা স্থাপনা আছে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ধান ও সবজি বেচাবিক্রি হয়। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বিদ্যালয় মাঠে ধান ও সবজির হাট বসাতে হচ্ছে।

রুহুল আমিন আরও বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা স্থানীয় লোকজন মাঠ ব্যবহারের বিষয়ে কোনো দিন আপত্তি করেননি। বিদ্যালয়ও সরকারি, হাটও সরকারি। বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসলেও শিক্ষার্থীদের ক্লাসের তেমন ক্ষতি হয় না। তা ছাড়া বিদ্যালয়ে একজন বদলি শিক্ষকের বেতন বাবদ প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা হাটের তহবিল থেকে পরিশোধ করা হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মাঠে হাট না বসানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একাধিকবার আগের ইউএনও স্যারের নজরে আনা হয়েছে। নতুন ইউএনও স্যার যোগদানের পর এখনো বিষয়টি অবগত করা হয়নি।’

ইউএনও মেরিনা আফরোজ মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে এখানে যোগদান করেছি। এ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কিংবা অন্য কেউ বিষয়ে আমার কাছে কেউ বিষয়টি জানাননি। কেউ অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারকে নিয়ে আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান করা হবে।’