নরসিংদীতে হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ায় যুবককে গুলি

গুলিবিদ্ধ সজিব মিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীতে একটি হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ায় সজিব মিয়া (৩০) নামের এক যুবককে গুলি করা হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে নরসিংদী সদর উপজেলা পাঁচদোনার স্যার কেজি গুপ্ত উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

গুলিবিদ্ধ সজিব মিয়া সদর উপজেলার পাঁচদোনা ইউনিয়নের আসমান্দিরচর এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে। তিনি শিবপুরের আলোচিত তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আরিফ হোসেন পাঠান হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী।

গুলিবিদ্ধ সজিব মিয়া বলেন, আজ বেলা দুইটার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। পাঁচদোনার স্যার কেজি গুপ্ত উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছার পর তিনি গুলিবিদ্ধ হন। হত্যা মামলার প্রধান আসামি টিটু, অন্য আসামি মাসুদ ও পলাশের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দুটি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সেখানে আগে থেকেই ওত পেতে ছিল। বিদ্যালয়টির সামনে পৌঁছামাত্র তাঁর ওপর দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। এ সময় তিনি দৌড়ে পালাতে শুরু করলে একটি গাড়ির ভেতর থেকে কাচ নামিয়ে তাঁকে গুলি করা হয়। পরে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁরা পালিয়ে যান।

সজিব মিয়া আরও বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার বাড়িতে এসে তাঁরা হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আদালতে সাক্ষ্য দিলে মেরে ফেলবেন। ১১ অক্টোবর মামলার শুনানির দিন আদালতের বিচারককেও এ ঘটনা আমি জানিয়েছিলাম। বিচারক আমাকে থানায় জিডি করার কথা বলেছিলেন। এরই মধ্যে আমার ওপর হামলার ঘটনা ঘটল।’

সজিবের পরিবারের সদস্যরা জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মহাসড়কে কাতরাতে থাকেন সজিব। কিন্তু এ সময় কেউ এগিয়ে আসছিলেন না। পরে বেলা আড়াইটার দিকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে উদ্ধার করে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে পাঠান। সেখানকার জরুরি বিভাগে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তাঁরা।

হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, সজিব মিয়া নামের ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তাঁর বুকের ডান পাশের ওপরের অংশে, অর্থাৎ হাতের সংযোগস্থলের পাশে গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন বলেন, হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনা তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের বরইতলা এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তৎকালীন স্থানীয় ইউপি সদস্য আরিফ হোসেন পাঠান। পরদিন তাঁর ছোট ভাই রোমান পাঠান বাদী হয়ে শিবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় আসামিদের মধ্যে টিটু, মাসুদ ও পলাশ ছিলেন। মামলায় অন্যতম সাক্ষী করা হয় সজিব মিয়াকে।

মামলার বাদী রোমান পাঠান বলেন, যেদিন তাঁর ভাইকে বরইতলা এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়, সেদিন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন সজিব মিয়া। তিনি সেখানকার এক স মিলের কর্মচারী ছিলেন। গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে এসে তিনি আসামিদের দেখতে পান। তাই এই মামলায় তাঁকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আসামি টিটু, মাসুদ ও পলাশ বর্তমানে জামিনে আছেন। আদালতে উপস্থিত হয়ে সজিব মিয়া যাতে সাক্ষ্য দিতে না পারেন, সে জন্য প্রথমে তাঁকে লোভ দেখানো হয়। কিন্তু ১১ অক্টোবর আদালতে সাক্ষী দিতে উপস্থিত হলে তাঁদের সামনেই সেখানে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ তাঁকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেন আসামি টিটু, মাসুদ ও পলাশ।