সড়ক সংস্কারের জন্য গত আগস্ট মাসে ঠিকাদারের লোকজন ভোপলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মাসখানেক ধরে বালু-পাথর আর পলিথিন স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে এবং খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার ছোট খোঁচাবাড়ি থেকে বালাপাড়া পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কাজটি পান ঠাকুরগাঁওয়ের ঠিকাদার গোলাম রসুল। গত আগস্ট মাসে সড়কটি সংস্কারের জন্য ঠিকাদারের লোকজন ভোপলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে বালু-পাথর ও পলিথিনের স্তূপ। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের পাশের সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। ওই সড়কের কার্পেটিংয়ের জন্য বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে ওই সব সামগ্রী রাখা হয়েছে।
বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক মিতা চক্রবর্তীকে পাওয়া গেল না। তিনি ছুটিতে রয়েছেন। সহকারী শিক্ষক আরজু বেগম বললেন, ‘মাসখানেক আগে ঠিকাদারের লোকজন বিদ্যালয়ের মাঠে বালু-পাথর রেখে যান। শুনেছি, তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি নিয়েছেন। বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ হচ্ছে।’
পরে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। পঞ্চম শ্রেণির লাম মিম আকতার ও হাসি আক্তার বলে, মাঠের মধ্যে পাথর ফেলে রাখায় তারা খেলাধুলা করতে পারছে না। তারা ঠিকমতো চলাচলও করতে পারে না। অনেক সময় পায়ে পাথর ফোটে, পা কেটে যায়। অনেকে পাথরের স্তূপে খেলতে গিয়ে পা ফসকে আহত হয়েছে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল আহাদ বলে, ‘আগে সুযোগ পেলে মাঠে ফুটবল খেলতাম। পাথর রাখার পর আর খেলা যায় না। খেলতে গেলেই পায়ে পাথরের টুকরা ফুটে যায়। গত সপ্তাহে খেলতে গিয়ে আমার শ্রেণির দুজনের পা পাথরে কেটে গেছে।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুশফিকা আক্তার বলেন, ‘পাথরের আঘাতে শিক্ষার্থীরা আহত হওয়ার পর থেকে ওদের আর মাঠে খেলতে দিই না। তবু ওরা নিষেধ অমান্য করে খেলতে চলে যায়।’
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আবদুস কাদের বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালামাল কোথায় রেখে রাস্তা নির্মাণ করবে, এ বিষয়ে আমাদের দেখার সুযোগ নেই। তবে শিশু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হয়, এমন কাজ না করাই উচিত।’
কাজটির মূল ঠিকাদার গোলাম রসুল দাবি করেন, তিনি কাজটি করছেন না। একজন সাব ঠিকাদার কাজটি করছেন। তিনি বিদ্যালয়ের মাঠে মালামাল রেখেছেন কি না, তা তাঁর জানা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাস্তা সংস্কারের কাজটি করছেন ঠিকাদার ইমরান হাসান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা ভেবে বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে গতকাল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুনা লায়লা মুঠোফোনে বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে পাথর রাখার বিষয়টি তিনি এইমাত্র শুনলেন। সরেজমিনে পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।