ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় ট্রাকের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সেটি কয়েকটি গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে যায়
ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় ট্রাকের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সেটি কয়েকটি গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে যায়

ঝালকাঠিতে দুর্ঘটনায় নিহত ১৪

ট্রাকে অতিরিক্ত মালামাল বহন ও গতিকে দায়ী করল তদন্ত কমিটি

ঝালকাঠির গাবখান টোল প্লাজায় ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১৪ জন নিহতের ঘটনায় ট্রাকে অতিরিক্ত সিমেন্ট বহন ও গতিকে দায়ী করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ট্রাকচালকের লাইসেন্স না থাকার কথাও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গতকাল রোববার বিকেলে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরোজকে প্রধান করে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিতুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঝালকাঠি জোনের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. মাহবুবুর রহমান ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক আরমানা সাবিহা হককে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্তের বিষয়ে অধ্যাপক আরমানা সাবিহা হক বলেন, ট্রাকটির ধারণক্ষমতা ১৫ টন হলেও সিমেন্টের পরিমাণ ছিল ২০ টন। সড়কটিতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৫০ কিলোমিটার হলেও ট্রাকটি ৬৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলছিল। ট্রাকচালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। তা ছাড়া তিনি ছিলেন বদলি চালক। মূল চালক ঈদের ছুটিতে ছিলেন। সাধারণত বদলি চালকদের দ্রুততম সময়ে ট্রিপ শেষ করার তাগাদা থাকে। তাই এ দুর্ঘটনায় চালকের গাফিলতিও রয়েছে।

আরমানা সাবিহা হক আরও বলেন, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের সড়কে কিছু দূর পরপর ভয়াবহ বাঁক রয়েছে। গাবখান সেতুটিও স্পাইরাল কার্ভের মতো। সেখানে গতিনিয়ন্ত্রণের জন্য ‘রাম্বল স্ট্রিপস’ থাকার কথা থাকলেও তা নেই। সেতু থেকে নামার পর সড়কের দুই পাশে ১২ ফুট করে গভীর খাদ রয়েছে। নিয়মানুযায়ী, সেখানে প্রতিবন্ধক থাকার কথা থাকলেও এর দেখা মেলেনি।

১৭ এপ্রিল ঝালকাঠির গাবখান সেতু টোল প্লাজায় সিমেন্টবোঝাই ট্রাকচালক নিয়ন্ত্রণ হারান। এতে ট্রাকটি মুহূর্তের মধ্যে সামনে থাকা একটি ট্রাক, একটি প্রাইভেট কার এবং দুটি ইজিবাইককে চাপা দেয়। এ ঘটনায় ১৪ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটি বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এতে সড়কের যেসব অংশে দুই পাশে গভীর খাদ রয়েছে, সেখানে ভরাট করা, আঞ্চলিক সড়কগুলোর দুই পাশে ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন তৈরি করা। পাশাপাশি যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাংশ (স্পিড ওয়ার্নিং ডিভাইস) বসাতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্টবোঝাই ট্রাকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সিমেন্ট পরিবহনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। সুপারিশমালায় সড়কে থ্রি-হুইলার বা অনিবন্ধিত যানবাহন চলাচলকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এগুলো চলাচল বন্ধের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়।