বন্যা কবলিত গ্রামে পৌঁছেনি কোনো সহায়তা। পানি কমে যাওয়ার পর সেই গ্রামের কিছু তরুণ এসে অপেক্ষা করছিলেন মহিপাল এলাকায়। কিন্তু ত্রাণবাহী কোনো গাড়ি থামেনি। তাঁরা কোনো সহায়তাও পাননি। আজ সকালে ফেনীর মহিপাল এলাকায়
বন্যা কবলিত গ্রামে পৌঁছেনি কোনো সহায়তা। পানি কমে যাওয়ার পর সেই গ্রামের কিছু তরুণ এসে অপেক্ষা করছিলেন মহিপাল এলাকায়। কিন্তু ত্রাণবাহী কোনো গাড়ি থামেনি। তাঁরা কোনো সহায়তাও পাননি। আজ সকালে ফেনীর মহিপাল এলাকায়

ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি: ‘এত খুঁজলাম কেউ খাবার দিল না’

ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও থেকে পাঁচজনের একটা দল ত্রাণের জন্য মহিপাল শহরে বসে ছিল। ত্রাণবাহী ট্রাক এলে তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কিন্তু তিন ঘণ্টা চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। কোনো ট্রাকই থামেনি।

গতকাল রোববার বেলা তিনটার দিকে ওই দলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয় মহিপাল শহরের ট্রাংক রোডে। তাঁদের একজন আবদুল আল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের গ্রামে পানি অনেক বেশি ছিল। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে কেউ বের হতে পারেননি। ত্রাণ নিয়েও কেউ যায়নি সেখানে। গতকাল পানি কমে যাওয়ার পর খাবার খুঁজতে তাঁরা বের হন।

আরেক সদস্য সিফাত হোসেন কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘ট্রাক থেকে এত খুঁজলাম, কেউ কিছু দিল না। স্বেচ্ছাসেবকদের গ্রামে নিয়ে যেতে চাইলাম, তা–ও গেল না। ওদিকে মানুষ মুড়ি, পানিও পাচ্ছে না।’

ফেনীতে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করার তিন দিন পর গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় পানি কিছুটা কমা শুরু করেছে। এতে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে দুর্গত মানুষেরা বেরিয়ে আসতে শুরু করেন।

খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়া আজাদদের বাড়ি বালিগাঁওয়ের সুন্দরপুরে। ওই গ্রামের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন, শেখ রাহাত, সিফাত হোসেন ও আবদুর রহমান—কেউ চাকরিজীবী, কেউ শিক্ষার্থী। তাঁরা ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় পরিবারের অন্যদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন। শেখ রাহাত জানান, সুন্দরপুর গ্রামটা সদর থেকে কিছুটা ভেতরে। গ্রামে সরু রাস্তা। কিছুটা পাকা ও কিছুটা মেঠো পথ। পুকুর, জলাশয়, গাছগাছালিতে ভরপুর। ছোট ছোট দোকানপাটও আছে। তবে বড় ভবনের সংখ্যা কম।

২০ আগস্ট বিকেল থেকে সুন্দরপুরে পানি বাড়তে থাকে। রাতের মধ্যে গ্রামের কাঁচাপাকা বাড়িঘর ডুবে যায়। পুকুরের মাছ, গোয়ালের গরু, ফসল; ভেসে যায়। রাহাত বলেন, এত পানি কীভাবে এল, তা গ্রামের মুরব্বিরাও বুঝতে পারছেন না। বাড়িঘর নিচু হওয়ায় সমস্যা বেশি হয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়।

সিফাত হোসেন জানান, হাজারখানেক লোক স্থানীয় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে। ২০ আগস্ট থেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু হয়। স্থানীয় মানুষ অনেককে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁরাও একই কাজ করেছেন।

ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর পাড়ঘেঁষা গ্রামগুলো এখনো ডুবে আছে। অনেক এলাকায় উদ্ধারকর্মীরা যেতে পারছেন না। পৌঁছাচ্ছে না ত্রাণসহায়তা। তার মধ্যে সুন্দরপুরও আছে। ভ্যানে চেপে ত্রাণ নিতে আসা সুন্দরপুরের এই তরুণদের আকুতি, অন্তত একটা ট্রাক সেখানে পৌঁছানো গেলে দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হবে। সুপেয় পানির তীব্র সংকট চলছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয়।