দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করার আগের রাতে আওয়ামী লীগ নেতা বিশ্বজিৎ ঘোষ ওরফে কাঞ্চনকে থানায় নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনে প্রার্থী না হতে চাপ দিতেই গত বুধবার মধ্যরাতে তাঁকে বাসা থেকে পুলিশের গাড়িতে করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজও মনোনয়নপত্র জমা না দিতে হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৩ আসনে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বজিৎ ঘোষ ও রাশেদ পারভেজ রাজনৈতিক জীবনে বেশির ভাগ সময়ই হুইপ ইকবালুর রহিমের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে গত চার বছরের বেশি সময় ধরে ইকবালুর রহিমের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব চলছে।
পুলিশ ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের বড়বন্দর এলাকায় নিজ বাসভবন থেকে পুলিশ একটি গাড়িতে করে বিশ্বজিৎ ঘোষকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসেন। পরে রাত সোয়া ২টার দিকে তাঁকে আবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিশ্বজিৎ ঘোষ। তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বিশ্বজিৎ ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলীয় প্রধান (শেখ হাসিনা) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো বাধা রাখেননি। আমার জনপ্রিয়তায় কেউ ঈর্ষান্বিত হতে পারে। মনোনয়ন ফরম কেনা থেকে জমা দেওয়া পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু দিনাজপুরের সাধারণ মানুষের ভালোবাসাকে আমি উপেক্ষা করতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের যাত্রায় সহযাত্রী হয়ে দিনাজপুরের অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’
থানায় তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘সাংবাদিকরা বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ রাখেন। কেন পুলিশ আমাকে তুলে নিয়ে গেল এই প্রশ্নের উত্তর আপনারাই খুঁজে বের করেন।’
এ বিষয়ে দিনাজপুর কতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন বলেন, ‘কুশল বিনিময় করার জন্য তাঁকে (বিশ্বজিৎ ঘোষ) ডাকা হয়েছিল। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সে জন্য তাঁর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। অন্য কোনো কারণ নেই।’
বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় বিশ্বজিৎ ঘোষকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁর কর্মী বজলার রহমান। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এরপর রাত সাড়ে ১২টায় বিশ্বজিৎ ঘোষ ফোনে জানান, ‘বাসার সামনে চারজন পুলিশ এসে ডাকাডাকি করছে। গাড়ি নিয়ে এসেছে।’ মিনিট দশেক পরে তিনি আবার ফোন দিয়ে থানায় আসতে বলেন। বজলার রহমান বলেন, ‘থানায় এসে দেখি টি শার্ট ও লুঙ্গি পড়া অবস্থায় দাদাকে থানায় ওসির রুমে নিয়ে এসেছেন। আমাদের কয়েকজনকে বের করে দেন। রাত সাড়ে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কথা বলে। সে সময় ওসি ফরিদ হোসেন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ জিন্নাহ আল মামুন কক্ষে বসা ছিলেন। পুলিশ নিজের গাড়িতে সোয়া দুইটার সময় বাসায় নামিয়ে দেন।’
বজলার রহমান আরও বলেন, পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণের বিষয়ে তিনি বিশ্বজিৎ ঘোষের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। তিনি তাঁকে জানিয়েছেন, নানা কথাবার্তা হয়েছে। তবে পুলিশ তাঁকে বলেছে, নির্বাচন থেকে দূরে থাকাই ভালো। এগুলো ঝুট-ঝামেলার মধ্যে জড়াইয়েন না। বজলার রহমানের দাবি, পুলিশ বাসার সামনে বিশ্বজিৎ ঘোষকে নামিয়ে ফেরার সময় বলছিলেন, ‘বুঝেন তো সবকিছু। আমরা না চাইলেও অনেক কিছু তামিল করতে হয়। আপনি কিছু মনে করবেন না।’
স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় আমার কাছে ফোন আসে যে সাধুরঘাটে একটা মিটিং চলছে। আমি যেন সাবধানে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে আসি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছে, তারা হয়তো মনে করছে দিনাজপুরে তাদেরই লোকজন আছে। আসলে এটা ভিত্তিহীন। আমরা যারা রাজনীতি করি, প্রত্যেকের সঙ্গেই জনবল আছে।’