বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো সহ-উপাচার্য (প্রো–ভিসি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন সহ-উপাচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক গোলাম রব্বানি নিয়োগ পেয়েছেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, গতকাল রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমোদনক্রমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৬-এর ১১ (১) ধারা অনুযায়ী এ নিয়োগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম গতকার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল বিকেলে এ–সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি আমরা।’
নিয়োগের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য পদে অধ্যাপক গোলাম রব্বানির নিয়োগের মেয়াদ হবে যোগদানের তারিখ থেকে চার বছর। এই পদে তিনি তাঁর বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতাদি পাবেন। তিনি বিধি অনুযায়ী পদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন এবং সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজনে যেকোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বরিশালের নাগরিক সমাজের দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০০৯ সালে তৎকালীন জাতীয় সংসদে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছরই নতুন নতুন বিভাগ চালু হচ্ছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, পাশাপাশি বাড়ছে নানামুখী চাহিদা। কিন্তু সেসব চাহিদা পূরণে অবকাঠামোসহ অন্যান্য উন্নয়ন পিছিয়ে আছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, নানা সংকটের মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক না থাকায় শিক্ষার মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া আবাসন, পাঠদান কক্ষ, পরিবহন ও গ্রন্থাগারে বইয়ের সংকটও ব্যাপক।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০৬ শিক্ষক আছেন। এর মধ্যে মাত্র ১ জন অধ্যাপক, ৫৬ জন সহযোগী অধ্যাপক কর্মরত। বাকিরা সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক। ২০৬ শিক্ষকের মধ্যে আবার শিক্ষা ছুটিতে দেশে ও দেশের বাইরে আছেন ৫৩ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর নতুন নতুন বিভাগ খোলা হলেও নেই প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আছেন মাত্র একজন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক স্বল্পতা প্রকট।
শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। বিপরীতে আবাসনের সুবিধা আছে হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থীর। ফলে আবাসিক–সংকটও প্রকট। ছেলে ও মেয়েদের জন্য দুটি করে চারটি আবাসিক হল থাকলেও সেখানে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। ফলে আট হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২০ আগস্ট তৎকালীন উপাচার্য মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, প্রক্টর আবদুল কাইউমসহ পাঁচ সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁরা পদত্যাগ করার ঘোষণা দেওয়ার পর ওই দিনই কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ ইসরাত জাহান, বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ তারেক মাহমুদ আবীর, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ হেনা রানী বিশ্বাস, শের-ই-বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক কবির হাসান ও শের-ই-বাংলা হলের সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আহমেদ ফয়সাল পদত্যাগ করেছিলেন।
আগের উপাচার্যের পদত্যাগের এক মাসের বেশি সময় পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক শুচিতা শরমিনকে। তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা বলছেন, এবার নতুন সহ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আসবে।
এ প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সহ-উপাচার্য মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক দিক দেখাশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সহ-উপাচার্যের পদ সৃষ্টি করা হলেও এখানে এই পদ শূন্য ছিল। এবারই প্রথম এই পদে সহ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।’