চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আলোচিত চেয়ারম্যান সেলিম খানের খোয়া যাওয়া শটগান উদ্ধার হলেও পিস্তলটির সন্ধান এখনো মেলেনি। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সেলিম খান ও তাঁর ছেলে চিত্রনায়ক শান্ত খানকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ সময় সেলিম খানের লাইসেন্স করা একটি পিস্তল ও একটি শটগান খোয়া যায়।
ওই অস্ত্রের সন্ধানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ তৎপর হলে ঘটনার ১০ থেকে ১২ দিন পর চাঁদপুর সদরের বাগাদী এলাকার এহসান মেম্বার নামের এক ব্যক্তি শটগানটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। তবে এখনো পিস্তলটির খোঁজ পাওয়া যায়নি।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন আজ মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি গত ১ সেপ্টেম্বর এই থানায় যোগদান করি। সেলিম খানের পিস্তল খোয়া যাওয়ার বিষয়টি এখনো অভিযোগ আকারে জানানো হয়নি। তবে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যত ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়, সরকার তা স্থগিত করেছে। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ আজ ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ জেলার থানায় জমা দিতে বলা হয়। এ ঘোষণার পর চাঁদপুরে অর্ধশতের বেশি আগ্নেয়াস্ত্র জমা হয় বলে চাঁদপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করেন। তবে সেলিম খানের হত্যার বিষয়ে বা তাঁর লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। আজকের মধ্যে এসব অস্ত্র জমা না পেলে উদ্ধারে অভিযানে নামব।’
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় সেলিম খান তাঁর দুই ছেলে শান্ত খান ও শাহিন খানকে নিয়ে একটি প্রাইভেট কারে করে চাঁদপুর থেকে পালিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁরা চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারে এসে বিক্ষুব্ধ জনতার সামনে পড়েন। এ সময় সেলিম খান আত্মরক্ষার জন্য নিজের পিস্তল থেকে ফাঁকা গুলি করে উদ্ধার হয়ে আসতে পারলেও পার্শ্ববর্তী বাগাড়া বাজারে এসে আবারও জনতার মুখোমুখি হন। সেখানেই বিক্ষুব্ধ জনতার পিটুনিতে সেলিম খান ও তাঁর ছেলে শান্ত খান ঘটনাস্থলে নিহত হন। তবে ছোট ছেলে শাহিন খান কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে আসেন। পরে স্থানীয় লোকজন সেলিম খান ও তাঁর বড় ছেলে শান্ত খানের লাশ উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু তখন পুলিশের কার্যক্রম না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁদের লাশ গ্রামের অল্প কয়েকজন মিলে দাফন করেন।
তাঁদের এক ঘনিষ্ঠজন জানান, সেলিম খানকে হত্যার সময় তাঁর লাইসেন্স করা দুটি অস্ত্র ছাড়াও হত্যাকারীরা তাঁদের সঙ্গে থাকা নগদ প্রায় দেড় কোটি টাকা এবং বেশ কিছু স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। এ সময় তাঁদের বহনকারী প্রাইভেট কারটিও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে কথা বলতে আজ বিকেলে লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে সেলিম খানের নবনির্মিত বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে আলিশান বাড়িটির ভেতর ঘুরে দেখা যায়, গত ৫ আগস্টে জনতার হামলায় তছনছ হয়ে খালি পড়ে আছে। ওই দিন বেঁচে যাওয়া সেলিম খানের ছোট ছেলে শাহিন খানের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।