বিএনপি নেতার হাতে থাকা বন্দুকটি আমার লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র: শাহজাহান ওমর

ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান ওমর এক সমাবেশ করেছেন। পাশে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে এক বিএনপি নেতা। সোমবার বেলা ১১টার দিকে কাঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে
ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় এক সমাবেশে অস্ত্র হাতে বিএনপি নেতাকে দেখা যাওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঝালকাঠি-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম)। তিনি আজ সোমবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি নেতা আবদুল জলিল মিয়াজীর হাতের বন্দুকটি আমার লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র। আমি বক্তব্য দেওয়ার সময় সেটি তাঁর হাতে দিয়েছিলাম। আমার নিরাপত্তার স্বার্থে এ অস্ত্র সঙ্গে রাখা হয়েছে।’

সোমবার বেলা ১১টার দিকে কাঁঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এ সমাবেশ করেন এ প্রার্থী। ওই সমাবেশে অস্ত্র হাতে এক বিএনপি নেতাকেও দেখা গেছে। তিনি শাহজাহান ওমরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সভায় উপস্থিত লোকজন বলেন, বন্দুকধারী ওই ব্যক্তির নাম আবদুল জলিল মিয়াজী। তিনি কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি।

এ ঘটনায় নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির প্রধান ও ঝালকাঠি সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক পল্লবেশ কুমার কুণ্ডু শাহজাহান ওমরের কাছে কৈফিয়ত তলব করেছেন। এ বিষয়ে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘আমি নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবের প্রস্তুতি নিচ্ছি। মঙ্গলবারের মধ্যে জবাব দেওয়া হবে।’

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা এর মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর। সম্প্রতি তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পরে ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। আজ সমাবেশ শুরুর আগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে উপস্থিত হন শাহজাহান ওমর। সমাবেশে শাহজাহান ওমর কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. গোলাম কিবরিয়া সিকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল বসার বাদশা, শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. মাহমুদ হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘কাঁঠালিয়া আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিং থাকতে পারবে না। ...আমি এবং বিএনপির দলবলসহ আপনাদের মেহমান। আমাদের বরণ করে নেবেন। আমরা শিক্ষিত লোক, আমাদের সম্মান করলে আপনাদেরও সম্মান করব।’

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন কবির বলেন, ‘আমি যে দলই করি না কেন, শাহজাহান ওমরকে পছন্দ করি। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর নির্বাচন করব। তাঁর নির্বাচনী মাঠে থাকব বলেই সমাবেশে গিয়েছি।’

জাকির হোসেন আরও বলেন, বন্দুকটি আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহজাহান ওমরের লাইসেন্স করা। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় পাশে বসে থাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আ. জলিল মিয়াজীর কাছে সেটি রাখেন।

কাঁঠালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, বৈধ অস্ত্র প্রকাশ্যে প্রদর্শন করা অপরাধ। যেহেতু নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি প্রার্থীকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। তাঁর জবাব পেয়ে কমিটি যে ব্যবস্থা নিতে বলবে, সেভাবে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির প্রধান ও ঝালকাঠি সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক পল্লবেশ কুমার কুণ্ডু বলেন, এ ঘটনায় শাহজাহান ওমরের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। আগামী বুধবার বিকেলের মধ্যে তাঁকে জবাব দিতে হবে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে।