খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিনের আর মাত্র বাকি এক দিন। এ উপলক্ষে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ১৮ পল্লিতে চলছে উৎসবের আমেজ। সেখানকার গির্জা ও বাড়িগুলো নতুন সাজে সেজেছে। প্রতিটি বাড়ির সামনে শোভা পাচ্ছে ক্রিসমাস ট্রি।
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী–অধ্যুষিত নবাবগঞ্জ উপজেলার ১৬টি গ্রাম, দোহার উপজেলার ১টি ও মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ১টি গ্রাম স্থানীয়ভাবে ১৮ পল্লি নামে পরিচিত। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বক্সনগর সাধু আন্তনীর গির্জায় চলছে সাজসজ্জার কাজ। গির্জার ভেতরে দৃষ্টিনন্দন কুঁড়েঘর নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন যিশুখ্রিষ্টের অনুসারীরা। এলাকার তরুণ–তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন তাঁদের বাড়ির উঠানের শোভাবর্ধনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বড়দিন উপলক্ষে অতিথি আপ্যায়নের জন্য বাড়িগুলোয় তৈরি করা হচ্ছে রকমারি পিঠাপুলি।
সুরেশ রিচিল সাধু আন্তনীর গির্জায় ২১ বছর ধরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, ধোয়ামোছা, লাইটিংসহ সব ধরনের প্রস্তুতি শেষের পথে।
গোল্লা এলাকার বাসিন্দা পলাশ রোজারিও বলেন, গির্জাগুলোয় ২৪ ডিসেম্বর রাত ৯টায় প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা থেকে লোকজন আসতে শুরু করবেন। ২৫ ডিসেম্বর ভোর থেকে উৎসব শুরু হবে। সকাল ৯টায় প্রার্থনা সভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
১৮ পল্লি এলাকায় গির্জা আছে ছয়টি। সেগুলোকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ও ঝলমলে আলোকসজ্জায়। গির্জার ভেতরে দৃষ্টিনন্দন কুঁড়েঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মাতা মেরির কোলে যিশুখ্রিষ্টের মূর্তি শোভা পাচ্ছে।
ছোটগোল্লা কুরারবাড়ি এলাকার দীপা বলেন, ‘বড়দিন উপলক্ষে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য আমরা কয়েক দিন ধরেই কেক ও পিঠাপুলি তৈরি করছি। অনেক আত্মীয়স্বজন দেশ ও দেশের বাইরে বসবাস করেন। বড়দিনে উপলক্ষে আসেন বেড়াতে। সবাই মিলে উৎসব উদ্যাপন করব। তাঁদের জন্য হরেক রকমের খাবার রান্না করা হবে।’
বক্সনগরের বাসিন্দা সিস্টার শিল্পী রোজারিও বলেন, ১৮ পল্লিতে ৬টি গির্জায় প্রার্থনা হবে। এর মধ্যে আছে বান্দুরার হাসনাবাদ পবিত্র জপমালা রানীর গির্জা, গোল্লায় সাধু ফ্রান্সিস জেভিয়ার গির্জা, তুইতাল পবিত্র আত্মার গির্জা, সোনাবাজু ফাতেমা রানী গির্জা ও মুন্সিগঞ্জের কেয়াইনে শুলপুর গির্জা এবং বক্সনগরের সাধু আন্তনীর গির্জা।
এদিকে বড়দিন উপলক্ষে বান্দুরা বাজারে কেনাকাটা অনেকটাই বেড়েছে। পোশাক ব্যবসায়ী আবুল শিকদার বলেন, প্রতিদিনই খ্রিষ্টান মহল্লার লোকজন আসছেন নতুন কাপড় কিনতে।
বেকারিগুলোয় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ভিড় বেড়েছে। বান্দুরা বাজারের সারা বেকারির মালিক মুকুল হোসেন বলেন, এবার কেক তুলনামূলক কম বিক্রি হচ্ছে। কারণ, বড়দিনে অনেকেই এখন বাড়িতে পিঠাপুলির সঙ্গে নিজেরাই কেক তৈরি করেন।
বড়দিনকে বরণ করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান বান্দুরা ইউনিয়নের হাসনাবাদ জপমালা রানীর ধর্মপল্লির পালপুরোহিত স্ট্যানিসলাউস গোমেজ। তিনি বলেন, নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। ২৪ ডিসেম্বর রাতে প্রার্থনার মাধ্যমে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
গির্জাগুলো পরিদর্শন করার কথা জানিয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলরুবা ইসলাম বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা তাঁদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করবেন। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।
নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, গির্জা ও আশপাশের এলাকায় সর্বাত্মক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পাশাপাশি সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে। বড়দিন উপলক্ষে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই।