চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁওতে টার্ফ (কৃত্রিম ঘাস) মাঠ দখল নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়ানো যুবদলের দুই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে নগর যুবদলের কমিটিও। গতকাল শুক্রবার জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলামের সই করা এক চিঠিতে এই তথ্য জানানো হয়। নগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মো. ইদ্রিস আলী বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
এদিকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে জুবায়ের উদ্দিন নামের এক যুবক ছুরিকাঘাতে নিহতের ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। এতে বিলুপ্ত হওয়া নগর যুবদলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক নুরুল আমিনসহ ৪০ জনকে আসামি করা হয়। নিহত জুবায়ের নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসাইনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে নগর যুবদল নেতাদের দাবি, জুবায়ের যুবলীগের কর্মী। তিনি যুবদলের কেউ নন।
চান্দগাঁও স্পোর্টস জোন কমপ্লেক্সটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫ দশমিক ২২ কাঠা জায়গায় নির্মাণ করা হয় এ আধুনিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স। চলতি বছরের জুন মাসে এটি উদ্বোধন করেন সাবেক সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, স্পোর্টস কমপ্লেক্সটি ১০ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে মোশাররফ হোসাইন নামের কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। গত শুক্রবার এটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসাইন। অনুষ্ঠানে মোশাররফ হোসাইন এবং নগর যুবদলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক নুরুল আমিনের অনুসারীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, মোশাররফ হোসাইন টার্ফটি ইজারা নিয়েছেন বলে দাবি তাঁর পক্ষের লোকজনের। তবে নুরুল আমিন গ্রুপের লোকজন টার্ফটি দখল নিতে চেয়েছেন। এর সূত্র ধরেই সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এতে একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নুরুল আমিনসহ ৪০ জনকে আসামি করে চান্দগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর গত শুক্রবার রাতে দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে চট্টগ্রাম নগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসাইন ও একই কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক নুরুল আমিনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলীয় সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় যুবদলের চট্টগ্রাম নগর শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন বলেও জানানো হয়।
জানতে চাইলে নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহত জুবায়ের আমাদের যুবদলের কেউ নন। তিনি যুবলীগের কর্মী।তাঁর ফেসবুকে যুবলীগের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ছবি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের ছবি রয়েছে। সংঘর্ষে জড়ানো নগর যুবদলের দুই নেতাকে বহিষ্কার কেন করা হয়েছে, উত্তরে তিনি বলেন, ঘটনার পর মোশাররফ নিজেই স্বীকার করেছেন নিহত জুবায়ের তার কর্মী। যুবলীগের কর্মীকে দলে এনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দল থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের কাছে আমরা বার্তা দিয়ে আসছি দলের নাম ভাঙাতে, যাতে নতুন করে কোনো বিশৃঙ্খলাকারী প্রবেশের সুযোগ না পায়।