‘সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি’ স্লোগানে ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ‘বেলগাছি লাইব্রেরি ও পাঠক ক্লাবের’ কার্যক্রম। পাঠাগারটি গ্রামের মানুষের একটা আদর্শ জায়গা হয়ে উঠেছিল। বই, পত্রিকা পড়তে প্রতিদিনই এখানে আসতেন গ্রামের নানা পেশার মানুষ। তবে ৫ আগস্টের পর পাঠাগারটি আর আগের অবস্থানে নেই। দুর্বৃত্তরা পাঠাগারটি ভাঙচুর করে অধিকাংশ বই পুড়িয়ে দিয়েছে।
১৯ আগস্ট বিকেলে বেলগাছি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লাইব্রেরি ভবনের এক পাশে চেয়ার পোড়ানো বর্জ্য ও অপর পাশে বই পোড়ানো ছাই পড়ে রয়েছে। কোনো জানালায় কাচ নেই। ভাঙা কাচের টুকরা নিচে পড়ে রয়েছে।
রাজশাহী শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার উত্তরে ও মোহনপুর উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের নিভৃত গ্রাম বেলগাছিতে এই পাঠাগার গড়ে তুলেছিলেন গ্রামের এক শিক্ষার্থী আবুল বাসার। তিনি তখন রাজশাহী কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই পাঠাগার উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে পাঠাগারের মোট সদস্য ১৩৩ জন। ১০ টাকার একটি ফরম পূরণ করে সদস্য হওয়া ছাড়া পাঠকদের আর কোনো ফি দিতে হয় না।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রথম আলোসহ দুটি দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়। প্রতিষ্ঠানটির সমাজসেবা ও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের নিবন্ধন রয়েছে। বই ছিল ৩ হাজার ১০০টি। আটটি আলমারি, একটি গোলটেবিল, একটি কম্পিউটার, দুটি ফ্যান ছিল। সব ভাঙচুর করা হয়েছে। পাঠাগারের অধিকাংশ বই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই পাঠাগারের জন্য জমি দান করেছেন কৃষক আব্দুস সালাম (৬০)। তিনিই এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতেও হামলা হয়েছে, তবে পাঠাগারের হামলাতে আমি বেশি কষ্ট পেয়েছি।’
পাঠাগারের সহকারী সম্পাদক শ্যামলী বেগম এসে বললেন, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরে বিজয় মিছিল নিয়ে এসে পাশের গ্রামের লোকজন তালা ভেঙে পাঠাগারে ঢুকে এই ভাঙচুর করে।
পাঠাগারের সদস্য কৃষক আশিকুজ্জামান (৪৫) বললেন, সকাল ১০টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত যাঁর যখন সময় হয় পাঠাগারে এসে বই পড়েন, পত্রিকা পড়েন। এটি গাঁয়ের একটা আদর্শ জায়গা হয়ে উঠেছিল। কেন যে পাঠাগারে হামলা চালানো হলো তারা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না।
কী কারণে হামলা হয়েছে, জানেন না পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা আবুল বাসার। এমন ঘটনা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন তিনি। মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকা বলেন, পাঠাগারে হামলার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক।