রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে ঢাকাগামী যানবাহনে চেকপোস্ট বসিয়ে কড়া তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় চেকপোস্টে যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় চেকপোস্ট থেকে কাউকে আটক করা হয়নি। তবে গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ফতুল্লা থানা যুবদলের আহ্বায়কসহ ২০ জনকে আটক করেছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) চাইলাউ মারমা প্রথম আলোকে বলেন, জেলার সাতটি থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে আটক করেছে। তাঁদের পরিচয় যাচাই–বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তবে তাঁর দাবি, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নাশকতার অভিযোগে করা পুরোনো মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। এর সঙ্গে ঢাকার সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা-পুলিশের একটি দল ঢাকাগামী বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালাচ্ছে। এ ছাড়া সোনারগাঁয়ের মেঘনা টোলপ্লাজার পশ্চিম পাশ, কাঁচপুর সেতুর পূর্বপাশ, রাজধানীতে ঢুকতে সাইনবোর্ড এলাকা এবং বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে।
এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চনপাড়া, ভুলতা ও তারাব মোড় এলাকায় পুলিশের তল্লাশিচৌকি দেখা গেছে। বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী সড়কপথে হয়রানি এড়াতে ট্রেনসহ বিভিন্ন উপায়ে ঢাকার সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
মৌচাকে কথা হয় জৈনপুরী পরিবহনের যাত্রী সোলায়মান মিয়ার সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পুলিশ তাঁদের সঙ্গে থাকা ব্যাগে তল্লাশি চালিয়েছে। তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন—এমন প্রশ্ন করেছে। বাসটির চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, চাঁদপুর থেকে আসার পথে তাঁদের মেঘনা ঘাট ও মৌচাক—দুটি পয়েন্টে তল্লাশি চালানো হয়েছে।
কুমিল্লা থেকে আসা তিশা পরিবহনের যাত্রী ইউসুফ মুন্সি বলেন, পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে তিনি নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছেন। তাঁদের গাড়ি পথে দুবার পুলিশি তল্লাশির মুখে পড়েছে। মৌচাকে পুলিশ বাড়ি থেকে নিয়ে আসা তাঁর সবজির ব্যাগ খুলে দেখেছে। তাঁর গন্তব্য জানতে চেয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে জানান, কোনো ব্যক্তি নাশকতার উদ্দেশ্যে গাড়িতে বিস্ফোরক বহন করছে কি না সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। চেকপোস্টে নিয়মিত তল্লাশির অংশ হিসেবে মহাসড়কে সন্দেহভাজন যাত্রীদের তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে তল্লাশিকালে কাউকে আটক বা অবৈধ কোনো কিছু উদ্ধার করা যায়নি। তিনি বলেন, বিভিন্ন মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে ফতুল্লা মডেল থানা-পুলিশ গতকাল রাতে ফতুল্লা থানা যুবদলের আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান মাসুদকে আটক করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি নূরে আযম প্রথম আলোকে বলেন, নাশকতার মামলায় মাসুদুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পুরোনো মামলা ছিল। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এর বাইরে গতকাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক ১৪ নেতা-কর্মীর নাম জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন। তাঁরা হলেন ফতুল্লা থানা যুবদলের আহ্বায়ক মাসুদুর রহমান; বিএনপির নেতা হারুনুর রশিদ; সোনারগাঁয়ের সাদীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল মিয়া; নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্য মো. হারুন; নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলম; ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল কর্মী কাউসার আহমেদ; মহানগর যুবদল কর্মী মেহেদী ও জাহিদ; সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব হাসান; আড়াইহাজারের সাতগ্রাম ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী মিয়া; সাতগ্রাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ফরহাদ খন্দকার; রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হোসেন; রূপগঞ্জের চনপাড়া ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক এবং চনপাড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নেতা-কর্মীরা যাতে ঢাকার সমাবেশে অংশ নিতে না পারেন, এ কারণে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশি হয়রানি ও বাধা উপেক্ষা করে অনেক নেতা-কর্মী সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে। ২০ অক্টোবর বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজার আগে আজ ঢাকার সমাবেশ হচ্ছে বিএনপির শেষ কর্মসূচি।