নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার্স কারখানার একটি অংশে আবারও আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার বিকেলে কারখানাটির ভেতরে থাকা ভাঙা যন্ত্রাংশ লুটপাটের পর পূর্ব পাশের ‘ওয়েস্টেজ অংশে’ আগুন দেওয়া হয় বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ নিয়ে চতুর্থ দফায় কারখানাটিতে আগুন দেওয়া হলো।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল মন্নান বলেন, সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে কারখানাটির ভেতরে ওয়েস্টেজ রাখার জায়গায় আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে গত বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কারখানার পূর্ব পাশের আরেকটি অংশে আগুন দেওয়া হলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তা নেভান বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানাটির একজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘এই কারখানায় আর কোনো নিরাপত্তা নাই। পুলিশ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সেই ২৫ আগস্ট থেকে কারখানাটি লুটপাট চলতেছে। গত বুধবার দিবাগত রাতেও লুটপাট করার পর কারখানাটিতে আগুন দেওয়া হয়। ওই সময় আমি থামাতে গেলে আমার দিকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে। আজকে বিকেলেও লুটপাটের পর কারখানাটিতে আগুন দেয় লোকজন।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে কারখানাটিতে শিল্প পুলিশের সদস্যরা মোতায়েন আছেন। আগুনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে শিল্প পুলিশ-৪ এর নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কারখানাটি অন্তত ৫০ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে কিন্তু চারদিক দিয়ে খোলা। যেকোনো জায়গা দিয়ে লোকজন ভেতরে ঢুকে পড়ছে। নিরাপত্তার জায়গা থেকে একটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। আমরা আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন কারখানাটিতে প্রথমবারের মতো হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। পরে কারখানাটির ভেতরে কয়েকটি স্থাপনা ও যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। টানা ৮ আগস্ট পর্যন্ত গাড়ির টায়ার প্রস্তুতকারী কারখানায় লুটপাট চলে।
এরপর ২৫ আগস্ট ভোরে একটি হত্যা মামলায় রাজধানী থেকে গোলাম দস্তগীর গাজী গ্রেপ্তার হলে ওই দিন বিকেলে কারখানাটিতে ঢুকে আবারও লুটপাট শুরু করেন স্থানীয় লোকজন। পরে রাত নয়টার দিকে কারখানাটির ছয়তলা একটি ভবনে আগুন দেওয়া হয়। টানা পাঁচ দিন পর এই ভবনের আগুন পুরোপুরি নেভানো হয়। এই ভবনের ভেতরে আটকা পড়ে অন্তত ১৮৪ ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেন তাঁদের স্বজনেরা। যদিও তাঁদের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস কিংবা প্রশসনের কেউ। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভেতরে ঢুকে উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কারখানার নিরাপত্তাকর্মীদের বাধা উপেক্ষা করে পোড়া ভবনটিতে ঢুকে পড়েন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা। তাঁরা ভবনটির তৃতীয় তলায় বেশ কিছু মানুষের হাড় ও মাথার খুলি পান বলে দাবি করেন। পরে তাঁরা এসব পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। ওই সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান জানান, এসব হাড়গোড় ও মাথার খুলি পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।