জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আগে সংস্কারের রোডম্যাপ চাই। তাঁরা কী কী সংস্কার করবেন, কতটুকু সময়ে সংস্কার করবেন। আমরা চাই, সরকার এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটি সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে। এই রোডম্যাপ যখন বাস্তবায়ন হবে, তার হাত ধরেই নির্বাচনের রোডম্যাপ হবে। সরকার যদি সফল হয়, তবেই জাতি একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পাবে; কিন্তু সরকারের কাজ যদি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হয়, তাহলে সেই নির্বাচন দিয়ে জাতির কোনো উপকার হবে না।’
আজ শনিবার বিকেলে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্মরণে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করে জেলা জামায়াত।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে জামায়াতের ওপর জুলুম করা হয়েছে। সাজানো আদালত বানিয়ে বিচারিক হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। ১১ জন জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়েছে; কিন্তু কোনো কিছুরই আমরা কোনো প্রতিশোধ নিইনি। আমরা তাঁদের ক্ষমা করে দিয়েছি; কিন্তু আমরা খুনের বিচার চাই। নির্বিচার গুলি করে মানুষ হত্যার বিচার চাই। কারণ যেসব মা সন্তানহারা হয়েছেন, যেসব সন্তান পিতৃহারা হয়েছে, তাঁদের বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন করেন, শহীদেরা কোনো দলের না। তাঁরা জাতীয় বীর। তাঁরা সবাই জাতির। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে তাঁদের প্রতিটি পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি। প্রতিটি পরিবার থেকে অন্তত একজনকে চাকরি দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, যারা বিগত সরকারকে সুবিধা দিতে নানা ষড়যন্ত্র করেছে, ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে, তাঁদের জনতার ট্যাক্সের টাকা খাওয়ার অধিকার নেই। আমরা চাই, এই পদগুলো শূন্য করে শহীদ পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়া হোক।’
‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার’ প্রসঙ্গ তুলে শফিকুর রহমান বলেন, ‘যেখানে পরাধীনতা থাকে, সেখানে স্বাধীনতা শব্দটি আসবেই। এত দিন আমরা ছিলাম ভৌগোলিক স্বাধীনতার পরাধীন জাতি। এত দিন আইন অসমান ছিল। কথা বলার অধিকার ছিল না। এখন আইন সমান হয়েছে। তাই অতীতে যারা অপরাধ করেছেন, তাঁদের বিচার হবেই।’ তিনি বলেন, ‘শত নির্যাতন মেনে আমরা জনগণের সঙ্গে ছিলাম। আপনাদের সন্তান হিসেবে এ দেশে ছিলাম; কিন্তু তাঁরা পালিয়েছেন। কোথায় পালিয়েছেন জানি না। কেন গেলেন তাঁরা? নিশ্চয়ই তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁদের পাপের বোঝা ভারী হয়ে গেছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর জামায়াতের আস্থা আছে উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, ‘আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন; কিন্তু ইতিমধ্যে আমরা ব্যতিক্রম কিছু দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষা কমিশনে কিছু চিহ্নিত লোককে বসানো হয়েছে। যারা এ দেশের সাধারণ মানুষের চেতনা বুঝতে পারে না। এদের হাতে শিক্ষাব্যবস্থার কোনো কল্যাণকর রূপরেখা তৈরি হতে পারে না। তাই আমরা চাই তাঁদের সরানো হোক।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। তাহলে জনগণের আস্থার জায়গা নড়ে যাবে। আর আপনারা নড়ে গেলে বাংলাদেশ নড়ে যাবে। আপনারা ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে। বিপ্লব ব্যর্থ হবে। তাই বর্তমান সরকারকে জাতিকে সম্মান করে এগিয়ে যেতে হবে। যেকোনো মূল্যে সরকারকে সফল হতে হবে।’
জেলা জামায়াতের আমির আবু তালেব মণ্ডলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ইকবাল হুসাইনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির জহুরুল ইসলাম খান, সাবেক আমির আব্দুর রহিমসহ জামায়াত ও শিবিরের নেতারা।