চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলোতে শেষ মুহূর্তে গরুর দাম কিছুটা কমে গেছে। তবে ছাগলের দাম ছাড়তে চাইছেন না বিক্রেতারা। এই যেমন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ২০টি ছাগল নিয়ে সাগরিকা হাটে এসেছেন। ছাগলগুলোর ওজন ১০ থেকে ১৫ কেজির বেশি হবে না। আজ রোববার দুপুরে ক্রেতা আরিফুর রহমান একটি ছাগলের দরদাম করতে গিয়ে বেশ বিরক্ত হলেন।
দরাদরির একফাঁকে প্রথম আলোকে আরিফুর রহমান বলেন, ‘তাঁর যেটি পছন্দ হয়েছে সেটি ১০ থেকে ১২ কেজি হতে পারে। বিক্রেতা শুরুতে দাম চেয়েছেন ২৫ হাজার টাকা। নামতে নামতে ১৯ হাজারে দাঁড়িয়েছেন। এত দামে নিলেও মাংসের কেজি পড়বে দেড় থেকে দুই হাজার টাকার মতো। ছাগলের দাম এত বেশি!’
আরিফুরের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বিক্রেতা মনিরুজ্জামান বলা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘লালন-পালনে খরচ বেড়েছে। খাবারের দাম বাড়তি। গাড়ি ভাড়াও বেশি। কম দামে কীভাবে দিব? বেশি লাভ করছি না। এক বছর ছাগল পেলে দুই হাজার টাকাও যদি না থাকে, তবে আর লাভ কী।’
আজ সাগরিকা হাট ঘুরে দেখা গেছে, ছাগলের কমতি নেই। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শয়ে শয়ে ছাগল নিয়ে হাটে খুঁটি গেঁড়েছেন ব্যাপারীরা। রাজশাহী থেকে এসেছেন ব্যাপারী সালাম মিয়া। তাঁর কাছে আছে ৩০টি ছাগল। গত চার দিনে ২১টি বিক্রি হয়ে গেছে। দাম বেশি পড়ছে কেন এ বিষয়ে প্রশ্ন রাখলে মনিরুজ্জামানের মতোই উত্তর দেন তিনি। তবে তাঁর দাবি, গত দুদিন দাম কিছুটা বেশি ছিল। শেষ দিনে এদিক-সেদিক করে ছেড়ে দিচ্ছেন।
হাটের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে কথা হলো আরও ১০ জন ব্যাপারীর সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে দুজন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বাসিন্দা। মো. আতাউল্লাহ ও রায়হান উদ্দিন নামের এ দুই তরুণ ব্যাপারী জানান, দুজনের বাড়ি এক জায়গায়। দুজন মিলে মিনি ট্রাকে ২৭টি ছাগল এনেছেন। গতকাল ছিলেন কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক বাজারে। সেখানে ৯টি বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলো নিয়ে এ হাটে চলে এসেছেন আজ সকালে। পরে চারটি বিক্রি করেছেন। বাকিগুলোও বিক্রি হয়ে যাবে, এমনটাই প্রত্যাশা তাঁদের।
মো. আতাউল্লাহ সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন এক ক্রেতা এসে হাজির হলেন। শুরু হলো দরদাম। ১৮ থেকে ২০ কেজি ওজনের একটি খাসির দাম বলা হলো ৪৫ হাজার টাকা; কিন্তু ক্রেতা শুরু করলেন ২৫ হাজার থেকে। শেষমেশ ২৯ হাজার টাকায় ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিলেন ছাগলটি। আর এ প্রতিবেদককে আতাউল্লাহ বলেন, কোনোটাতে লাভ হচ্ছে, কোনোটাতে লস।
‘এক হাজার টাকা না দিলে গরু দিব না’
সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের বাসিন্দা ফরিদুল আলমের বাজেট ছিল ৬০ হাজারের মতো। কিন্তু গরু পছন্দ হলে আরও কিছু বাড়াবেন, এমনটাই পরিকল্পনা ছিল তাঁর। সাগরিকা হাটের বাইরের সড়কে হাঁটতে হাঁটতে ছোট আকারের একটি গরু পছন্দ হয়ে যায় চল্লিশোর্ধ্ব এ ক্রেতার। তারপর দাম কত, এ প্রশ্ন ছুড়ে দেন বিক্রেতা মোহাম্মদ সেলিমের দিকে। সেলিম বলেন, ‘লম্বা কথা বলব না। বেচাবিক্রি নাই। একদাম ৭৮ হাজার পড়বে।’ ফরিদুল আলম ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য এক পায়ে রাজি। কিন্তু বিক্রেতা নাছোড়বান্দা। এক টাকাও কমানোর ইচ্ছা নেই তাঁর। তারপর ৫০০, ১ হাজার করতে করতে ৭০ হাজারে গিয়ে থামলেন ক্রেতা। তারপরও গরুটি দিতে চাইছিলেন না বিক্রেতা মোহাম্মদ সেলিম। একপর্যায়ে বলে উঠলেন, ‘আর এক হাজার দেন, গরু নিয়ে যান। এক হাজার না দিলে গরু দিব না।’
শেষে টাকা বুঝিয়ে দিয়ে গরুর দড়ি হাতে প্রথম আলোর এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলো ফরিদুল আলমের। তিনি বলেন, ‘গরুটা দেখতে সুন্দর। আসলে সুন্দর না হলে ছেলেরা পছন্দ করবে না। তাই হাজার পাঁচেক টাকা বেশি হলেও কিনে নিলাম।’
চট্টগ্রামে এবার তিনটি স্থায়ী ও সাতটি অস্থায়ী হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড় গরুর বিক্রি তুলনামূলক কম। ছোট ও মাঝারি গরু বেশি কিনছেন ক্রেতারা। মাঝারি ও বড় গরুর দাম কিছুটা কমে গেছে। বিবিরহাটের ব্যাপারী খাঁ মোহাম্মদ নুরুন্নবী ছয়টি গরু নিয়ে এসেছিলেন। সব কটিই বড় আকারের। দাম ধরেছিলেন ২ লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ পর্যন্ত। তিনি জানান, দুটি বিক্রি হয়েছে। চারটি থেকে গেছে। এখন দামে ছাড় দিয়ে বিক্রি করে দিতে চান তিনি।