মনিরামপুরে মুক্তেশ্বরী নদী  

বালু তুলে আশ্রয়ণ প্রকল্প 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নির্দেশে শ্রমিকেরা হাজরাইল এলাকা থেকে বালু তুলছেন। 

মুক্তেশ্বরী নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার মনিরামপুর উপজেলার হাজরাইল এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মুক্তেশ্বরী নদী থেকে বালু তুলে নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে। ওই জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) নির্দেশে শ্রমিকেরা উপজেলার হাজরাইল এলাকা থেকে ওই বালু তুলছেন। এতে নদীর পাড় ভাঙনের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর ধারা ৪ অনুযায়ী, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা–বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কোনো সরকারি কার্যক্রম বা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজনে বালু বা মাটি উত্তোলনের ক্ষেত্রে এই আইনের বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে না। এজন্য কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন হবে।

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ–নদী দিয়ে। চৌগাছা উপজেলার পাশে মজ্জাতের বাঁওড়ের বিপরীত দিকে ভৈরব নদ থেকে বেরিয়ে মুক্তেশ্বরী নদী যশোর সদর ও মনিরামপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর অভয়নগর উপজেলার গোঘাটা নামের স্থানে টেকা নাম ধারণ করেছে নদীটি। টেকা নদী উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় শ্রী নদীতে পতিত হয়েছে। শ্রী নদী কিছুদূর এগিয়ে মনিরামপুর উপজেলার কপালিয়ায় হরি নদের সঙ্গে মিশেছে। 

মনিরামপুর উপজেলার কাটাখালী গ্রামের শেষ অংশে পশ্চিম পাশে উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে গেছে মুক্তেশ্বরী নদী। এ নদীর ওপর সেতু। সেতুর প্রায় ৪০০ মিটার দক্ষিণে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এ জন্য নদীতে আড়াআড়িভাবে মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে হাজরাইল এলাকায় বালু তোলা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পূর্ব পাশে ফসলের মাঠ। পশ্চিম পাশে নদীর বাঁধ ঘেঁষে সারিবদ্ধ বেশ কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। একটি ঘরের সামনে নদীতে ভাসছে একটি পাটাতন (বোর্ড)। তেলের কয়েকটি টিনের ড্রামের ওপর তক্তা বিছিয়ে বাঁশের সঙ্গে মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে তৈরি করা হয়েছে পাটাতন। দুজন শ্রমিক পাটাতনের ওপর দাঁড়িয়ে বালু তোলার কাজ তদারক করছেন। দুটি বালু তোলার যন্ত্র (ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপের ইঞ্জিন) রয়েছে পাটাতনের ওপর। একটি যন্ত্র থেকে দুটি পাইপ নদীতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই পাইপ দিয়ে নদী থেকে বালু কেটে ওপরে তোলা হচ্ছে এবং অপর যন্ত্রটি পানির সঙ্গে সেই বালু প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে সামনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। মাটির রাস্তার ওপর দিয়ে নেওয়া প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে ঠেলে দেওয়া পানির সঙ্গে সেই বালু যাচ্ছে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ভোমরদহ গ্রামে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশ্রয়ণ প্রকেল্পের এক নারী বাসিন্দা বলেন, প্রায় এক মাস ধরে নদীর অল্প একটু জায়গার মধ্যে এদিক–ওদিক করে বালু তোলা হচ্ছে। যেভাবে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে, তাতে বাঁধ ভেঙে নদীর মধ্যে পড়বে।

বালু উত্তোলনকারী ইদ্রিস আলী সরদার বলেন, ‘পিআইও স্যারের কথামতো নদী থেকে বালু তুলে ওই নিচু জায়গা ভরাট করে দিচ্ছি। পাঁচজন শ্রমিক কাজ করছি। কাজ শেষ হতে আরও সপ্তাহখানেক লাগবে। তেলের দাম অফিস থেকে দিচ্ছে। প্রতিদিন হাজিরা বাবদ ৬০০ টাকা করে পাচ্ছি।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম আবু আবদুল্লাহ বায়েজিদ বলেন, ‘ভোমরদহ গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৯টি ঘর নির্মাণ করা হবে। এ জন্য নদী থেকে বালু তুলে নিচু জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সরকারি উন্নয়নকাজে নদী থেকে বালু তোলা যাবে। নীতিমালা মেনেই বালু তোলা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে গতকাল রোববার জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান অনুমতি নিয়ে সেখানে বালু তোলা হচ্ছে কি না, তা এখনই বলতে পারছেন না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন তিনি।