কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি: নুরুল হক নুর

গণঅধিকার পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল হক নুর। শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নুরুল হক (ভিপি নুর) বলেছেন, ‘কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। আমরা চাই না, আওয়ামী লীগের মতো আগামীর বাংলাদেশে আবার কেউ ফ্যাসিবাদ কায়েম করুক।’

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় জেলা ও মহানগর গণ অধিকার পরিষদ আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হক এ কথা বলেন। এ গণসমাবেশে গণ অধিকার পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি নাহিদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আরিফ ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

নুরুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে, ভিন্নমতের মানুষের নামে মামলা-হামলা দিয়ে, ভারতের নীলনকশায় এই দেশে ফ্যাসিবাদী ও একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে যাঁরাই কথা বলেছেন, লড়াই করেছেন, তাঁদের কারাগারে যেতে হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগের মতো আগামীর বাংলাদেশে আবার কেউ ফ্যাসিবাদ কায়েম করুক, সেটা চাই না। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাচ্ছি।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, চাঁদাবাজ-দখলবাজরা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে, দেশ ছেড়েছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের ফুটপাত, শিল্পকারখানা, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। দখলবাজি বন্ধ হয়নি। শুধু হাতবদল হয়েছে।

নুরুল হক বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল যদি ভেবে থাকে, আমরা ক্ষমতায় চলে আসছি। ক্ষমতা অনেক দূরে, এটা অন্তর্বর্তী সরকার, অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক দলের সরকার নয়। নুর আরও বলেন, ‘আপনারা যাঁরা ভিন্নমতের ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন, নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন, মামলা দিচ্ছেন, আপনারা আওয়ামী লীগ থেকে শিক্ষা নিন। এত বড় সরকার, এত বড় রাজনৈতিক দল, এত বড় রাষ্ট্র, ভারতের সমর্থন, ১৫ বছরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণ করেছে, ফ্যাসিবাদের সরকার নায়ক শেখ হাসিনা জুতাটা পরার সময়ও পান নাই। কাজেই বাড়াবাড়ি বন্ধ করুন। তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, সেনাশাসন ডাইকা আইনেন না। পরে কোথাকার আগুন কোথায় যায়, কোন ঘটনা কোথায় যায়, সেটি কিন্তু বলা যায় না। কাজেই আমাদের রক্তচক্ষুর ভয় দেখাবেন না। আমাদের মধ্যে বিভক্তি করে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের সুযোগ দিয়েন না।’

নুরুল হক আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশকে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে যে কয় বছর, দুই, এক ও তিন বছর লাগুক, আমরা সরকারকে সেই সময় দিতে চাই। তবে সরকারকে জনরোষ ও গণক্ষোভ তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মানুষের ভোগান্তি—এগুলো নিরসন করতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠবে। কাজেই সবার সহযোগিতা নিয়ে রাষ্ট্রে শৃঙ্খলা আনুন। সমাজ এবং রাষ্ট্রে যে বিদ্যমান নৈরাজ্য চলছে, সেগুলো বন্ধ করুন।’

বিগত ১৫ বছর ও তার আগে নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, এই ওসমান পরিবার মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে এই ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা ‘খেলা হবে’ হুংকার দিয়েছিল, কিন্তু খেলা শুরুর আগে খেলোয়াড়েরা মাঠ ছেড়ে পালিয়েছে।

নুরুল হক বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে যাঁরা জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন, সমস্ত প্রশাসনসহ যাঁরা ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে গিয়ে গণহত্যায় দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের ঠিকানা এখন কারাগারে। কাজেই আজকে ইউএনও-ওসি, এসপি-ডিসি, কমিশনারও যদি কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেন, তাঁদেরও কিন্তু একই পরিণতি হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যত দিন থাকবে, প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। সব দল ও মানুষের প্রতি ইনসাফ কায়েম করবেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা কায়েম করবেন, এটা আমরা আহ্বান জানাই।’

ছাত্র-জনতা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে লড়াই করে জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, সেই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য জানিয়ে নুরুল হক বলেন, পুরোনোদের ব্যর্থতার জঞ্জাল অপসারণে নতুন কোনো রাজনৈতিক দলের আসার কোনো বিকল্প নাই। দেশ-জাতি-মানুষের রক্ষায় নতুন ধারার রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার জন্য নতুনদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।