প্রতিটি রুটে দেড় থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া দিতে না চাইলে লাঞ্ছিত করেন শ্রমিকেরা।
বাড়তি ভাড়া নেওয়ার প্রতিবাদসহ ছয় দফা দাবিতে আজ মানববন্ধন করা হবে।
বরিশাল নগরের সদর রোডে অশ্বিনী কুমার হলের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হবে।
বরিশাল নগরসংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর পূর্ব তীরে চরকাউয়া থেকে সড়কপথে সাতটি পথে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এসব পথে চলাচলকারী যাত্রীরা।
যাত্রীরা বলছেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে সড়কপথে সাতটি পথে বাস চলাচল করে। চরকাউয়া বাস মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে এ সাতটি পথে যাত্রী পরিবহন করা হয়। মালিক সমিতি ও শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। বাড়তি ভাড়া নেওয়ার প্রতিবাদসহ ছয় দফা দাবিতে ‘চরকাউয়ার সাতটি সড়কপথের যাত্রীবৃন্দ’–এর ব্যানারে আজ সোমবার মানববন্ধন করা হবে। সকাল ১০টায় বরিশাল নগরের সদর রোডে অশ্বিনী কুমার হলের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হবে।
ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে চরকাউয়া বাস মালিক সমিতি কর্তৃক নেওয়া বর্ধিত বাসভাড়া প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেওয়া, যাত্রী হয়রানি বন্ধ, নিয়মিত যাত্রীদের ভাড়া কম নেওয়া, লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকদের দ্বারা বাস চালানো এবং ফিটনেসবিহীন বাস অপসারণ।
চরকাউয়া থেকে যে সাতটি রুটে বাস চলাচল করে, সেগুলো হলো চরকাউয়া-গোমা, চরকাউয়া-লাহারহাট, চরকাউয়া-কাটাদিয়া, চরকাউয়া-নেহালগঞ্জ, চরকাউয়া-ডিসি রোড, চরকাউয়া-হলতা ও চরকাউয়া-টুমচর।
চরকাউয়া-গোমা পথের নিয়মিত যাত্রী এবং এই নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ফারুক মল্লিক অভিযোগ করেন, চরকাউয়া থেকে প্রতিটি রুটে দেড় থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কোনো যাত্রী বাড়তি ভাড়া দিতে না চাইলে তাঁকে লাঞ্ছিত করেন বাসের শ্রমিকেরা। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও ভাড়া কম নেওয়া হয় না।
ফারুক মল্লিক অভিযোগ করেন, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার প্রতিবাদ করায় গত ২৬ আগস্ট বাসের শ্রমিকেরা তাঁকে মালিক সমিতির অফিসকক্ষে নিয়ে আটকে রাখেন এবং লাঞ্ছিত করেন। যাত্রীরা মালিক ও শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, চরকাউয়া-গোমা রুটে ১৫ কিলোমিটার সড়কে বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া ৩৩ টাকা। কিন্তু সেখানে নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। চরকাউয়া-লাহারহাট রুটে ১৪ কিলোমিটার সড়কে ৩০ টাকা ৮০ পয়সার স্থলে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। চরকাউয়া-কাটাদিয়া রুটে ১০ কিলোমিটার সড়কে ২০ টাকা ৯০ পয়সার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। চরকাউয়া-নেহালগঞ্জ রুটের ১২ কিলোমিটার সড়কে নির্ধারিত ভাড়া ২৬ টাকা ৪০ পয়সা হলেও আদায় করা হচ্ছে ৪০ টাকা। এ ছাড়া চরকাউয়া-ডিসি রোড রুটে ২১ কিলোমিটার সড়কে ৫০ টাকা ভাড়ার স্থলে নেওয়া হয় ৯০ টাকা। চরকাউয়া-হলতা রুটে ১৩ কিলোমিটার সড়কে নির্ধারিত ভাড়া ২৮ টাকা ২০ পয়সার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা এবং চরকাউয়া-টুমচর রুটে ১৬ কিলোমিটার সড়কে ৩৯ টাকা ৯৬ পয়সার স্থলে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭০ টাকা।
যাত্রীরা জানান, এই সাত রুটের বেশির ভাগ বাসের ফিটনেস নেই। অধিকাংশ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
অভিযোগ আছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সাতটি পথে বাস পরিচালনা এবং ইচ্ছেমাফিক ভাড়া আদায় করায় মালিক সমিতির নেতাদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে মতভেদ হওয়ায় সম্প্রতি চরকাউয়া বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে দ্বন্দ্বের বিষয়টি অস্বীকার করে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ইচ্ছে করেই মালিক সমিতিতে যাই না।’
চরকাউয়া বাস মালিক সমিতির সভাপতি মনিরুল ইসলাম সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রভাব খাটিয়ে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন পরিচালনা করছেন।
এ সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে যাত্রীরা মনে করছেন, বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। চরকাউয়া থেকে সাতটি পথে রুট পারমিট আছে, এমন বাসে যাত্রী পরিবহন করা হয়। এ ছাড়া লাইসেন্স ছাড়া কোনো চালক বাস চালান না।
বরিশাল জেলা যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির সদস্যসচিব এবং বিআরটিএর বরিশালের সহকারী পরিচালক শাহ আলম বলেন, নতুন ভাড়ার তালিকা করে চরকাউয়া বাস মালিক সমিতিকে দেওয়া হয়েছে। এটি কার্যকর হয়েছে কি না, তা জানেন না। বাড়তি ভাড়া নেওয়া হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।