সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে পরিবারের তিনজনকে হারিয়ে কবরের পাশে বসে আছেন নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মা সুফিয়া বেগম। আজ সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রায়মনি গ্রামে।
সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে পরিবারের তিনজনকে হারিয়ে কবরের পাশে বসে আছেন নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মা সুফিয়া বেগম। আজ সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রায়মনি গ্রামে।

দুর্ঘটনায় নিহত বাবা-মা-মেয়ের কবর হলো বসতঘরের সামনে

বসতঘরের সামনেই নতুন তিনটি কবর। কবরগুলোর সামনে মানুষের ভিড়। কবরের পাশে বসে অঝোরে কাঁদছেন নিহতদের স্বজনেরা। আজ রোববার সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রায়মনি গ্রামে সড়ক ‍দুর্ঘটনায় নিহত তিনজনের বাড়িতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

নিহত তিনজনের জন্য কান্না ছাড়াও মানুষের আলোচনায় ছিল সড়ক দুর্ঘটনার সময় মায়ের পেট চিরে জন্ম নেওয়া মেয়ে নবজাতকটি। সে যেন শোকস্তব্ধ রায়মনি গ্রামে একটুখানি আনন্দের উপলক্ষ।

গতকাল শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কোর্ট ভবন এলাকায় সড়ক পার হতে গিয়ে মারা যান রায়মনি গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (৪২), তাঁর স্ত্রী রত্না বেগম (৩২) ও ৬ বছরের কন্যাশিশু সানজিদা। দুর্ঘটনার সময় ট্রাকচাপায় অন্তঃসত্ত্বা মা রত্না বেগমের পেট চিরে জন্ম নেয় একটি নবজাতক।

আজ সকাল নয়টার দিকে রায়মনি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহত জাহাঙ্গীরের কবরের সামনে আহাজারি করছেন মা সুফিয়া বেগম। পাশে বসে আছে জাহাঙ্গীরের বড় মেয়ে জান্নাত (১০) ও ছেলে মো. এবাদত (৮)। সুফিয়া বেগম অস্পষ্ট স্বরে বলতে থাকেন, ‘আমার বাবা আর আসবে না।’

জাহাঙ্গীর আলমের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিবন্ধী। তিনি বলেন, কবরের জন্য অন্য কোনো স্থান না থাকায় ঘরের সামনেই কবর দিতে হয়েছে তাঁদের। জাহাঙ্গীর আকিজ গ্রুপের কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। অভাব-অনটনে চলত তাঁর সংসার। জাহাঙ্গীর মারা যাওয়ার পর তাঁর নবজাতক সন্তান ছাড়াও আরও দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। তবে দুর্ঘটনার সময় জন্ম নেওয়া নবজাতককে তাঁরা নিজেরাই লালন-পালন করবেন বলে জানান মোস্তাফিজুর।

রায়মনি গ্রামের বাসিন্দা মো. আলম বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় কষ্ট পেয়েছি। নতুন সন্তানটি বেঁচে থাকায় আনন্দও পেয়েছি। যেভাবেই হোক, আমরা সবাই সহযোগিতা করে হলেও বাচ্চাদের পাশে থাকতে চাই।’

জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রত্না বেগম অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। প্রসবের নির্ধারিত সময় অতিক্রম করায় দুশ্চিন্তায় পড়েন ওই দম্পতি। গতকাল শনিবার সকালে রত্না বেগমের আলট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য তাঁরা ত্রিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে উপজেলার কোর্ট ভবন এলাকায় সড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনজন। ওই সময় ট্রাকচাপায় রত্না বেগমের পেট চিরে জন্ম নেয় নবজাতকটি। নবজাতকটি আজ সকালে ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিল। সে শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।