বনের জায়গা দখল করে এভাবে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে হ্রদ। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি হাতির চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ও সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় হ্রদের একাংশ
বনের জায়গা দখল করে এভাবে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে হ্রদ। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি হাতির চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ও সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় হ্রদের একাংশ

বন ডুবিয়ে হ্রদ

দোষীদের শাস্তি চায় বাপা

চট্টগ্রামে বন ডুবিয়ে কৃত্রিম হ্রদ তৈরিতে বাঁধ দেওয়ার ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সংরক্ষিত বনের আড়াই হাজার একর জায়গা দখল করে হ্রদ করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বাপা।

আজ শনিবার বাপার সভাপতি নুর মোহাম্মদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতাকে পুঁজি করে দুষ্কৃতকারীরা দেশের পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড করে থাকে।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া বনের প্রায় আড়াই হাজার একর বনভূমি ডুবিয়ে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। সেই হ্রদে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। হ্রদটি তৈরি করা হয়েছে বনের সোনাকানিয়া নামে একটি ছড়ায় বাঁধ দিয়ে। বাঁধের দৈর্ঘ্য ২০০ ফুটের মতো। প্রস্থ ২০ ফুট ও উচ্চতা ১০০ ফুট।

আজ প্রথম আলোয় ‘বন ডুবিয়ে প্রভাবশালীদের হ্রদ’ শীর্ষক প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম এবং বাঁধের কারণে বন, পাহাড় ও কৃষিজমির ক্ষতির চিত্র তুলে ধরা হয়। বন বিভাগের দাবি, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়া শুরু করলেও সদ্য সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য (চট্টগ্রাম-১৫) আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বাপা বলে, হ্রদ তৈরির ফলে গামারি, সেগুন, চিকরাশি, অর্জুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় প্রায় পাঁচ লাখ গাছ মারা গেছে। ডুবে যাওয়া জায়গার মধ্যে বন্য হাতির চলাচলের পথ ছিল।

খেঁকশিয়াল, শজারু, বন্য শূকর, বনমোরগ, ময়ূর, গুইসাপ, অজগরসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী এবং নানা প্রজাতির প্রাণী বাস করত সেখানে।

বাপার বিবৃতিতে বলা হয়, বৃক্ষ নিধনের কারণে অক্সিজেনস্বল্পতা দেখা দেয়, বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পায় বহুগুণে। যেখানে একটি পরিপূর্ণ গাছ বছরে ৪৮ পাউন্ড হারে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রদান করে, তাতে অন্তত দুজন মানুষ নিশ্বাস নিতে পারে। স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলে এ কাজ মানুষ হত্যার থেকেও ভয়াবহ।

পরিবেশ ধ্বংসকারী সব ধরনের উন্নয়নের বিপক্ষে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, পরিবেশ বাঁচলে দেশের মানুষ বাঁচবে। পরিবেশ ও মানুষের সহাবস্থানই উৎকৃষ্ট পন্থা। পরিবেশকে বিপন্ন করে মানবসভ্যতা কল্পনাও করা যায় না।