ঢাকার পর এবার চট্টগ্রামে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। এতে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফরিদুল আলম, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীসহ আটজনকে আসামি করা হয়। বাকি ছয় আসামি হলেন চাম্বল ইউপির সদস্য ইফতেখার উদ্দিন, মো. সাজ্জাদ, ইহসান, নাছির, ফরহাদ ও সাইফুল।
আজ বুধবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সালা উদ্দিনের আদালতে মামলার আবেদনটি করেন একটি মানবাধিকার সংগঠনের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এম এ হাশেম। তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি। বাদীর আইনজীবী ইরফান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করে আদেশের জন্য রেখেছেন।
মামলায় মানবাধিকারকর্মী পরিচয় দেওয়া এম এ হাশেম দাবি করেন, ৬ নভেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফরিদুল আলম। তাঁর ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে ৬ নভেম্বর কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ফরিদুল আলম। সেই বক্তব্যের ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে ফরিদুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা জানেন, বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কী একটা পাতিহাঁস আসছে। পিটার হাস বদমাইশ। সে বিএনপির হয়ে যে অসভ্য কাজকারবারগুলো বাংলাদেশে করছে, তাকে পেলে জবাই করে মানুষকে খাওয়াইতাম। সেই পিটার হাস, বদমাইশ।’
ভিডিওতে ফরিদুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা জানেন, বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কী একটা পাতিহাঁস আসছে। পিটার হাস, বদমাইশ। সে বিএনপির হয়ে যে অসভ্য কাজকারবারগুলো বাংলাদেশে করছে, তাকে পেলে জবাই করে মানুষকে খাওয়াইতাম। সেই পিটার হাস, বদমাইশ।’
৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় কালারমারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা। প্রধান বক্তা ছিলেন সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওচমান শরীফ প্রমুখ।
বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদুল আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিটার হাস আমাদের মেহমান। তাঁকে জবাই করে মানুষকে খাওয়ানোর বিষয়ে বক্তব্য দিইনি।’ ভিডিওর কথা উল্লেখ করা হলেও তিনি বক্তব্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এর আগে ফরিদুল আলমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে পিটার হাসকে হত্যার হুমকির অভিযোগে মামলার আবেদন করেছিলেন এম এ হাশেম। ২৩ নভেম্বর আদালত তা খারিজ করে দেন।
একই অভিযোগে ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল ইউপির চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীসহ সাতজনের বিরুদ্ধেও মামলা নেওয়ার আবেদন করছিলেন এম এ হাশেম। পরে ঢাকার সিএমএম আদালত সেদিন মামলা নেওয়ার আবেদন খারিজের আদেশে দেন। আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন আবেদন করা হলে আগামী বছরের ১৪ জানুয়ারি শুনানির জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে দিন ধার্য রয়েছে।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশে মুজিবুল হক বলেন, ‘পিটার হাস বলছেন, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। পিটার হাস, আমরা আপনাকে ভয় পাই না। আমরা মোটা চালের ভাত খাই। আপনি বিএনপির ভগবান। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ ইমান বেচি না। আপনাকে এমন মারা মারব, বাঙালি কত দুষ্ট তখন বুঝতে পারবেন।’
মামলার আবেদনে বলা হয়েছিল, ৬ নভেম্বর চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী প্রকাশ্য জনসভায় হত্যার হুমকি দেন। এই হত্যার হুমকির খবরটি সব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ‘অবরোধ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সভায় মুজিবুল হক চৌধুরী ঢাকায় নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের উদ্দেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেন। সমাবেশে তাঁর দেওয়া সাড়ে ১৮ মিনিটের বক্তব্য ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
চাম্বলে আয়োজিত সমাবেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশে মুজিবুল হক বলেন, ‘পিটার হাস বলছেন, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। পিটার হাস, আমরা আপনাকে ভয় পাই না। আমরা মোটা চালের ভাত খাই। আপনি বিএনপির ভগবান। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ ইমান বেচি না। আপনাকে এমন মারা মারব, বাঙালি কত দুষ্ট, তখন বুঝতে পারবেন।’